ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হতে আরও কদিন বাকি আছে, তবে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ ভোট দিয়ে দিয়েছেন। শুনতে একটু অবাক লাগলেও, এটাই সত্য যে সব রাজ্যেই এই বিশেষ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে কদিন ধরেই, আর এক্ষেত্রে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নিয়ে আসা হচ্ছে।
এই ব্যবস্থার অধীনেই ভোট দিয়েছেন কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গার বাসিন্দা কুমুদিনী বর্মন। ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার বয়স ১১৪ বছর।
কোচবিহার আসনে ভোট গ্রহণের দিন ১৯শে এপ্রিল। তবে মিসেস বর্মনের ভোটটি আগেই বাড়িতে গিয়ে নিয়ে এসেছেন ভোট কর্মীরা।
প্রথম দফায় ১৯শে এপ্রিল যেসব আসনের ভোট গ্রহণ হবে, সেই সব জায়গাতেই এই প্রক্রিয়ায় ভোট নেওয়া হচ্ছে। তবে এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র ৮৫ বছরের ওপরের প্রবীণ এবং যাদের শরীরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে, তাদের জন্য।
কয়েক বছর আগে থেকেই ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রবীণ নাগরিক এবং বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে।
ছবির ক্যাপশান, নিজের বাড়িতেই ভোট দিচ্ছেন ১১৪ বছর বয়সী কুমুদিনী বর্মন
এতদিন ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের এই ব্যবস্থায় ভোট নেওয়া হতো, এবছর সেই বয়সটা বাড়িয়ে ৮৫ করা হয়েছে।
যেভাবে ভোট দিলেন কুমুদিনী বর্মন
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছরের ভোটে ৮৫ বছর বা তার বেশি ভোটারের সংখ্যা ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯৯ জন। এদের মধ্যে একশো বছর পার করা ভোটার আছেন দুই লাখ ১৮ হাজার ৪৪২ জন। তাদেরই একজন কোচবিহারের কুমুদিনী বর্মন।
কোচবিহারের জেলা নির্বাচন দফতর ভোটার তালিকা দেখেই কুমুদিনী বর্মনকে এ বছর ওই জেলার সবচেয়ে প্রবীণ ভোটার বলে জানিয়েছে। তবে মিসেস বর্মন এখনও চলাফেরা করতে পারেন বাড়ির মধ্যে।
তার ছোট ছেলে মন্টু বর্মন বলছিলেন, “মা প্রতিবারই ভোট দিতে যায়। কিন্তু আমাদের কাউকে নিয়ে যেতে হয় রিকশা করে। এ বছর অফিস থেকে এসে জানিয়ে গিয়েছিল যে যদি আমরা চাই তাহলে মা বাড়িতেই ভোট দিতে পারবেন।
“সেই মতো উনার এসে ভোট নিয়ে গেল,” জানাচ্ছিলেন মি. বর্মন।
কীভাবে বাড়িতে ভোট নেওয়া হয়
দুটি পদ্ধতিতে প্রবীণ ব্যক্তিরা বিশেষ ব্যবস্থায় বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করাতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের একজন উপমুখ্য নির্বাচন অফিসার।
তিনি বলছিলেন, “একটা পদ্ধতিতে আমরাই ভোটার তালিকা থেকে ৮৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের তালিকা তৈরি করি। তাদের বাড়িতে বুথ পর্যায়ের নির্বাচন অফিসারকে পাঠানো হয়। ওই প্রবীণ ব্যক্তি যদি বাড়িতে বসেই ভোট দিতে চান তাহলে তাকে একটা ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হয়।
“নির্বাচনের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে ওই ফর্ম আমাদের দফতরে জমা করতে হয়। আবার প্রবীণ মানুষরা নিজেরাও এই সুবিধা নিতে পারেন ফর্মটি পূরণ করে। এরপরে একটা নির্দিষ্ট দিন জানিয়ে দেওয়া হয় যে কবে ভোট নিতে যাওয়া হবে তার বাড়িতে,” জানাচ্ছিলেন ওই উপপ্রধান নির্বাচন অফিসার।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যাদের রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতার পরিমাণ যে ৪০ শতাংশের বেশি তার সরকারি নথি দেখাতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গের প্রথম দফায় ভোটের কেন্দ্রগুলিতে মোট প্রায় ১২ হাজার মানুষ এভাবে বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার জন্য যোগ্য বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
বাড়িতেই ভোটের বুথ
সাধারণভাবে ভোটের তারিখের বেশ কিছুদিন আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এ বছরের প্রথম দফায় যেহেতু ভোট নেওয়া হবে ১৯শে এপ্রিল, তাই পাঁচই এপ্রিল থেকে ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়ার কাজ চলবে।
পরবর্তী দফার ভোট গ্রহণ হবে যেসব কেন্দ্রে, সেখানে পরে চালু হবে এই প্রক্রিয়া।
ওই উপ প্রধান নির্বাচন অফিসার বলছিলেন, “বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়া নির্দিষ্ট দিনে প্রিসাইডিং অফিসার, ভোট কর্মী এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ পুরো দল গিয়ে গোপনীয়তা মেনে ওই প্রবীণ ব্যক্তি বা বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তির ভোটটি নিয়ে আসেন সিল করা অবস্থায়। সাধারণভাবে যদিও ভোট যন্ত্রে ভোটগ্রহণ হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে পেপার ব্যালট ব্যবহার করা হয়। গণনার সময়ে এগুলি পোস্টাল ব্যালটের সঙ্গে গোনা হয়।”
ভোট গ্রহণের নির্দিষ্ট দিনে ওই প্রবীণ বা বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে কোনও কারণে বাড়িতে না পাওয়া গেলে দ্বিতীয় একটি দিনে যাওয়া হয়। তবে তার থেকে বেশিবার বাড়িতে ভোট নিতে যাওয়ার নিয়ম নেই। পুরো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার ভিডিও রেকর্ডিংও করা হয়।
নির্বাচন কমিশন বলছে একজন ভোটারও যেন বাদ না যান, সেজন্যই যারা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছাতে অক্ষম, বুথই তাদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে।