বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির তদন্তে ‘ফায়ার আই’
অগ্রসর প্রতিবেদক : হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ডলারের বেশি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআইয়ের ম্যানডিয়েন্ট ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ যাবত্কালের সবচেয়ে বড় বড় সাইবার চুরির ঘটনাগুলোর বেশ কয়েকটির তদন্ত করেছে সিলিকন ভ্যালির কোম্পানি ফায়ারআই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সই অর্থ লোপাটের তদন্তে ফায়ারআইকে সম্পৃক্ত করেছে বলে সংশ্লিষ্ট দুজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকেশ আস্তানাই এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। এক সময় বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিভাগে পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, আস্তানাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি তদন্তে ম্যানডিয়েন্টকে এনেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তাদের একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ হ্যাকাররা কীভাবে চুরি করল তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৬শ’৪৮ কোটি টাকা (৮১ মিলিয়ন ডলার) গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ওই দেশের রিজাল কমার্স ব্যাংকের ৫ জন গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক, সিটিব্যাংক ও ওয়েলস্ ফারগো– এই তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। এই অর্থ গত বছরের মে মাসে খোলা ৫টি হিসাবে জমা করা হয়েছে। এ হিসাবগুলো ওই মে মাসেই ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভার হ্যাক করে ৬ হাজার ৯শ’ ৯০ কোটি টাকা (৮৭০ মিলিয়ন ডলার) ফিলিপাইনের রিজাল কমার্স ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে করে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ছাড় না করার নির্দেশ দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা গতকাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমেই হ্যাকার ঢুকেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নয়। হ্যাক হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম। যেখান থেকেই হ্যাকড হোক, প্রযুক্তি বলছে যে ভাইরাস ইনফেকশন অথবা অভ্যন্তরীণভাবে পিন কোড না দিলে এই অর্থ স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের আগে কারা জড়িত থাকতে পারে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে এর সঙ্গে তো দেশের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে।