অনলাইন ডেস্ক- দেশের কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি একাধিক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। গতকাল সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রতিনিধি এডোয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ‘ঘটনাগুলো শিশু অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। পুরো দেশকে ধাক্কা দেয়া এসব ঘটনায় ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
সিলেট, খুলনা ও বরগুনায় সম্প্রতি নির্যাতনের ফলে তিন কিশোরের মৃত্যুর ঘটনার পর এ বিবৃতি দিল ইউনিসেফ। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘জাতিসংঘ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে বাংলাদেশ সরকার সাধ্যমতো সবকিছু করবে।’ শিশু নির্যাতনের এসব ঘটনা জনসম্মুখে আনায় দেশের গণমাধ্যমের প্রশংসা করেন বেগবেদার। তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফ বাংলাদেশ গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করছে।’ শিশুর অধিকার হরণের প্রচেষ্টা সব পক্ষের সামষ্টিক প্রচেষ্টায় রুখে দেয়া হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুন সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ এনে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিশু সামিউর রহমান রাজনকে। নির্যাতনের সময় ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়া হয় ইন্টারনেটে। ভিডিওচিত্রে নির্যাতনের দৃশ্য দেখে দেশজুড়ে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আলোচিত এ হত্যা মামলায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সৌদি আরবে আটক এ হত্যা মামলার আরেক আসামি কামরুল ইসলামকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কামরুল ইসলামকে ফেরাতে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের দুই এসআই ও এক ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ দিকে খুলনা নগরীতে ৩ আগস্ট শিশু শ্রমিক রাকিবকে বর্বর নির্যাতনে হত্যা করা হয়। টুটপাড়া কবরখানার উত্তর-পূর্ব কোনে শরীফ মোটরস নামে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে চাকায় হাওয়া দেয়ার পাইপ শিশু রাকিবের মলদ্বারে ঢুকিয়ে কমপ্রেসারের মাধ্যমে হাওয়া দিলে তার মলদ্বার ও ফুসফুস ফেঁটে যায় এবং নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে যায়। ওই রাতেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় শিশু রাকিব। এ ঘটনায় নিহত শিশু রাকিবের বাবা নূরু আলম হাওলাদার বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় একটি মামলা করেন। এ ছাড়া বরগুনায় রবিউল আউয়াল নামে আরেক শিশুকে চোখে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তালতলী উপজেলার আমখোলা গ্রামের একটি মাছের ঘের থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মাছ চুরির অভিযোগে স্থানীয় এক ব্যক্তি শিশুটিকে বীভৎসভাবে মেরে ফেলেছে বলে পরিবারের অভিযোগ। পুলিশ বলছে, শিশুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।