অগ্রসর রিপোর্ট : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা উদ্বোধন ও লোগো উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন জায়গায় কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার জন্য সারা দেশে ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্টে, বিভাগীয় শহরগুলোতে, ৫৩ জেলা ও দুই উপজেলায় এবং ঢাকায় মোট ৮৩টি পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হয়েছে।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আগামী ১৭ মার্চ। ক্ষণগণনা হিসেবে ১০ জানুয়ারি বেছে নেয়ার কারণ এই দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে বেলা ১টা ৪১ মিনিটে বাঙালি জাতির এই অবিসংবাদিত নেতা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এ সময় তার পাশে ছোট বোন শেখ রেহানা এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন যুক্তরাজ্যের যে বিমানটি ছিল, সেই বিমানের আদলে একই ধরনের একটি প্রতীকী বিমান (c-130j) অবতরণ করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে। এই সেই বিমানের প্রতিরূপ, যে বিমানে করে এই দিনে একই স্থানে দেশের মাটিতে পা ফেলেছিলেন জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান। আর প্রিয় নেতাদের স্বাগত জানাতে আবেগাপ্লুত জনগণ অপেক্ষা করছিলেন। বিমানটি অবতরণ করার পর নির্ধারিত স্থানে এসে থামে। এ সময় লেজার রশ্মির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়- বিমানবন্দর থেকে নামছেন বঙ্গবন্ধু। বিমানের চারপাশ ঘিরে স্লোগান দিচ্ছে উত্তাল জনতা। এ যেন সেই দিনে ফিরে যাওয়া! বঙ্গবন্ধুর রূপক আলোকবর্তিকাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয় জনতা। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা।
বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে বিমানের দরজায় বঙ্গবন্ধুর অবয়বে আলোকবর্তিকা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময় দাঁড়িয়ে সম্মান জানান সবাই। আলোটি ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে লাল গালিচার মাথায় এসে থেমে যায়। এ আলোকবর্তিকা দিয়ে প্রতীকী অর্থে বঙ্গবন্ধুকে বোঝানো হয়। লেজার লাইটে তার অবয়ব এগোতে থাকে আর লাল গালিচায় ফুল ছিটিয়ে মহান এই নেতাকে স্বাগত জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর রূপক আলোকবার্তিকা লাল গালিচা পরিভ্রমণ শেষ করলে সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। একই সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠে। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যসহ উপস্থিত সবাই।
এরপর বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তার পাশে ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে ল্যাপটপের বাটন টিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের লোগোর উন্মোচন ও ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন। ক্ষণগণনা উদ্বোধন করার পর সময় বাকি ছিল ৬৬ দিন ৬ ঘণ্টা ৪১ মিনিট। এর মাধ্যমে সারা দেশে একযোগে বসানো ঘড়িগুলোতে ক্ষণগণনা শুরু হয়।
তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে এই কর্মসূচি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান করেছে।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণের শততম বছর পূর্ণ হবে। বাংলাদেশ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে।
বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগের গত সরকারের ১০ জন মন্ত্রী, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন সাবেক গভর্নর, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিককর্মী।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় রয়েছেন।
১৭ মার্চ মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গবন্ধুর সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বকে। তাদের মধ্যে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ। জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন শুরু হবে ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সময়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশজুড়ে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপিত হবে। সরকার ও দলীয় স্তরে গণমানুষের অংশগ্রহণের পাশাপাশি দেশে এবং বিদেশে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবে বিদেশি মিত্ররাও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, সরকার বিশ্বজুড়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চায়। বিদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর চেয়ার চালু করা, বঙ্গবন্ধুর নামানুসারে রাস্তার নামকরণসহ ২৬১টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাস।
বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্ন পূরণ হয়। আর এই স্বপ্ন পূরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।