ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচারের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের ৩০টি পেজ ও আইডিকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এসব পেজ বন্ধের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নানারকম ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচার, জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা, কথিত জিহাদের ডাকসহ রাষ্ট্রবিরোধী নানারকম অপকর্ম করা হচ্ছে। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করার পর এসব পেজকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কিছু ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব ওয়েবসাইট এসব অপপ্রচার চালিয়ে তরুণ কোমলমতি কিশোরদের বিভ্রান্ত করছে, সেগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া, জঙ্গিবাদে উস্কানি দেওয়া, সবই ফৌজদারি অপরাধ। এগুলো বিদেশ থেকে করা হয়। এগুলোকে বন্ধ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক অথরিটি বা সোশ্যাল মিডিয়া অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিহ্নিত করা ফেসবুক পেজগুলোতে নিয়মিত ধর্মীয় উগ্র মতামত প্রচার করা হয়। ধর্মীয় নানারকম অপব্যাখ্যা বা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। এগুলো দেখে অনেকেই ভুল করে এসব পথে পা বাড়াচ্ছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করা ফেসবুক পেজগুলো হলো—হিজবুল ইসলাম বাংলাদেশ, সালাউদ্দিনের তলোয়ার, বাংলার সৈনিক, গাজওয়া ই হিন্দ বা হিন্দুস্থানের চূড়ান্ত যুদ্ধ, শাইখ মুফতি মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন রাহমানি, আবু উবাইদা আল মুজাহির, অনিমেষ রায় ফরইভার, মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানি হাফিজাহুল্লাহ বা এসো আল্লাহর পথে, রাসুল- (সা.) এর দেখানো পথে, আবাবিল মিডিয়া, আমি সেই, নির্ভীক মুজাহিদ, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবি, কাকা আমুর, সামস বিন সাবাজ, জংগীর সাথে কথোপকথন, গাজী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আবু হুজাইফা হুজাইফা, আল্লাহর পথের ঠিকানা, আশিদ্দাও আলাল কুফ্ফার, নয়ন চ্যাটার্জি, জীবনের হিসাব, বার্বীপ্রিন্স, বাঁশের কেল্লা, রাফি বিন ওয়ালিদ, জঙ্গীনিউজ ২৪, আত-তামাকিন, কাঠ মোল্লা, অর্থহীন রাকিব ও বেহুলার ভেলা।
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, এই ৩০টি ফেসবুক আইডি বা পেজের বাইরেও আরও অনেকগুলো আইডিতে জঙ্গিরা সক্রিয় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেসব পেজ বা আইডি চিহ্নিত করে বিটিআরসিতে চিঠি পাঠিয়ে বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজমের একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পারস্পারিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করছে অনলাইনে। এসব পেজের অ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই বিদেশে অবস্থান করে। ফলে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। কাউন্টার টেররিজমের ওই কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইটেও চলছে ধর্মীয় উগ্র-মতবাদের প্রচারণা। এর আগেও বেশ কিছু ফেসবুক পেজ, আইডি, ব্লগ ও ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু একটি বন্ধ করা হলে জঙ্গিরা নতুন নামে আরেকটি পেজ বা আইডি খুলে একই কাজ শুরু করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিরা অনলাইনের মাধ্যমে সদস্যও সংগ্রহ করছে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত অনলাইন মনিটরিং করছি। যেসব ফেসবুক আইডি বা পেজ, ব্লগ, ওয়েবসাইটে ধর্মীয় উগ্রমতবাদ ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ করার জন্য বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছি।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) একজন কর্মকর্তা জানান, ৩০টি ফেসবুক পেজ বা আইডি চিহ্নিত করে বন্ধ করার সুপারিশের একটি চিঠি পুলিশের কাছ থেকে এসেছে। আমরা এগুলো যথাযথ নিয়মে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেই। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা ভেরিফাই করার পর বন্ধ করে দেয়। ওই কর্মকর্তা জানান, ধর্মীয় উগ্র-মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে এসব আইডি বা পেজের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।