অগ্রসর রিপোর্ট: ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ওরফে বংবং বিপুল ভোটে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে চলেছেন।
বিবিসি জানায়, দেশটির নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১ কোটি ৬০ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক সিনেটর বংবং মার্কোস। দেশটিতে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি। বংবং পেয়েছেন ৩ কোটি ৬ লাখ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট লেনি রোব্রেদো পেয়েছেন ১ কোটি ৪৬ লাখ ভোট। ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লেনি রোব্রেদোর নিকট হেরেছিলেন মার্কোস জুনিয়র। ফলে চূড়ান্ত ঘোষণার আগেই ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বংবংই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।
ব্যাপক দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দুনিয়াজোড়া কুখ্যাতি অর্জন করা মার্কোস পরিবার আবারও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশের শাসন ক্ষমতায় ফিরতে পারবে, এটা এক সময় ছিল অকল্পনীয়।
ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বংবং ফিলিপাইনের সপ্তদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে রদ্রিগো দুতার্তের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
রদ্রিগো দুতার্তের বিরুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে বিনা বিচারে হত্যার রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, দুতার্তের সময়ে বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় ঢালাও দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি ফিলিপাইনে চালু হয়েছে, তার জের টানতে হতে পারে বহু দিন।
তবে বংবংয়ের সামনেও বিপুল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাকে দেশটির বিপুল অর্থনৈতিক ঘাটতি আর ঋণে জর্জরিত দেশটির অর্থনীতিকে পুনর্বাসনে তাকে কাঠখড় পোহাতে হবে।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, গত শতকের আশির দশকে বংবংয়ের বাবার শাসনামলে ফিলিপাইনের অর্থনীতির যে দুরবস্থা ছিল, বর্তমানে এখন সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে দেশটির অর্থনীতি।
১৯৮৬ সালে প্রবল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন বংবংয়ের বাবা ফার্দিনান্দ মার্কোস। সেসময় বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে মার্কাস পরিবারের সদস্যদের চমৎকার সব তৈলচিত্র, সোনায় মোড়া বাথটাব, ১৫টি মিঙ্ক কোট, ৫০৮টি ডিজাইনার গাউন এবং মার্কোসের স্ত্রী, ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের ৩ হাজার জোড়া জুতার বিশাল সংগ্রহ দেখতে পান।
পরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং আদালতে দাখিল হওয়া নথিতে মার্কোসদের পরিবারের ব্যাপক বিলাসিতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অকাট্য সব প্রমাণ উঠে আসতে থাকে।
এ ছাড়া মার্কোস পরিবার কীভাবে লাখ লাখ ডলার অবৈধভাবে সুইস ব্যাংকে স্থানান্তর করেছে এবং নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে অসংখ্য সম্পত্তি কিনেছে, তার তথ্য পরে বিভিন্ন নথিতে বেরিয়ে আসে।
১৯৮৬ সালের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অভ্যুত্থানের সময় যখন মার্কোস পরিবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলো, ২৮ বছর বয়সী বংবং সেদিন বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন একনিষ্ঠ ছেলের মতই।
অবশ্য ১৯৭২ সালে তার বাবা একটি ডায়েরিতে ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছিলেন, “বংবংকে নিয়েই আমাদের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। সে একেবারেই উদাসীন, আর অলস।”
বংবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি (পিপিই) বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তবে বংবং স্নাতক পাস করতে পারেননি বলে গুঞ্জন থাকলেও তিনি তা স্বীকার করেন না।
দেশটির সংবাদ পোর্টাল ভেরাফাইলসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, দুইবার পরীক্ষায় ফেল করার পর ফিলিপাইনের কূটনীতিকরা সামাজিক বিজ্ঞানে একটি বিশেষ ডিপ্লোমা দেওয়ার জন্য হবু প্রেসিডেন্টের পক্ষে সেসময় লবিং করেছিলেন।