অগ্রসর রিপোর্টঃ স্বপ্নের নবনির্মিত পায়রা সমুদ্রবন্দরে প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ আগমনের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম আগামী ১৩ আগস্ট শনিবার উদ্বোধন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান উদ্বোধনের সময় কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরে উপস্থিত থাকবেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা বলা হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআর’র চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক পায়রা বন্দরে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পায়রা বন্দরের বহিঃনোঙ্গর এবং রাবনাবাদ চ্যানেলের মুরিং বয়াতে জাহাজ মুরিং করে মালামাল খালাসের মাধ্যমে অপারেশন কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে চীন থেকে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এম ভি ফরচুন বার্ড’ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন পাথর নিয়ে বহিঃনোঙ্গরে অবস্থান করছে। এসব পাথর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে আরো দু’টি বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম উদ্বোধন করলে স্বল্প পরিসরে পায়রা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হবে। আর এ অপারেশনাল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পর ২০১৩ সালে সৃষ্ট এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।
উদ্বোধনের পর থেকে এ বন্দর ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তোলার জন্য ৩টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম লক্ষ্যমাত্রা- বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনয়ন ও লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা। দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা- আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরে অন্তত একটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি বাল্ক টার্মিনাল প্রস্তুত করা এবং তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা- পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে (২০২৩ সাল) ধাপে ধাপে বন্দরের অন্যান্য আনুষঙ্গিক পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গড়ে তোলা।
এ অপারেশনাল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
পূর্ণাঙ্গ বন্দর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম ১৯টি কম্পোনেন্ট-এ ভাগ করা হয়েছে। যার ৬টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ১৩টির মধ্যে ৭টি জি টু জি ও ৬টি ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের (এফডিআই) মাধ্যমে করার চেষ্টা চলছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পোনেন্ট হলো মেইন চ্যানেল ড্রেজিং ইতোমধ্যে বিশ্ববিখ্যাত একটি কোম্পানীর সাথে এফডিআই পদ্ধতিতে এ কাজ করার জন্য এমওইউ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরের প্রণীত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আধুনিক বন্দর সুবিধা সম্বলিত পরিবেশবান্ধব বন্দর গড়ে উঠবে এবং শিল্পায়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে।
বিভিন্ন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য এ বন্দর এখন প্রস্তুত। এ জন্য বন্দরের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা, পায়রা বন্দর প্রকল্প ভূমি অধিগ্রহণ আইন-২০১৫, ৭২ নটিক্যাল নৌ-পথ জরিপ, সমুদ্র ও নদীপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বয়া স্থাপন, ক্ষুদ্র পরিসরে অফিস বিল্ডিং নির্মাণ, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, পোর্ট রেডিও কন্ট্রোল স্টেশন (ভিএইচএফ) স্থাপন, ১০০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ইউএন লকেটর কোড, আইএসপিএস কোড, বিদ্যুতায়ন, পিওএমএমডি কর্তৃক নৌ বাণিজ্য ছাড়পত্র, শুল্কায়ন, ইমিগ্রেশন সার্ভিস, কোয়ারেন্টাইন, পোর্ট হেল্থ, শিপ হ্যান্ডিলিং অপারেটর নিয়োগ, সি এন্ড এফ ও এজেন্সী সার্ভিস, ট্যারিফ নির্ধারণ, ওয়েবসাইট, জাহাজের রাজস্ব ও শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক কাজ হয়েছে।
আউটার অ্যাংকরেজ থেকে রাবনাবাদ চ্যানেলে ঢোকার পথে পানির সর্বনি¤œ গভীরতা প্রায় ৫ মিটার। চ্যানেলের ভেতর এই গভীরতা ১৬ থেকে ২১ মিটার। চ্যানেলের ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করা হলে জোয়ারের সময় ১৪ মিটার গভীর (চট্টগ্রামে আসে সর্বোচ্চ ৯.২ মিটার) এবং ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট জাহাজ (চট্টগ্রামে আসে সর্বোচ্চ ১৮৬ মিটার) এই বন্দরে আসতে পারবে।
প্রায় ছয় হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে সমগ্র পায়রা সমুদ্রবন্দর। এ বন্দরে তৈরি হচ্ছে- কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল। সেই সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধশিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ আরো অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হলে গ্যাসের মাধ্যমে এখানেই সার কারখানা চালু করা সম্ভব হবে।
পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ইপিজেড, এসইজেড, জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত খাতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। নতুন শিল্প এলাকা গড়ে ওঠার সুবাদে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বরিশাল, পটুয়াখালি এবং ভোলা জেলার বাসিন্দারা।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।