গতকাল মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে ‘শেপিং এ নিউ ওয়াটার ইকোনমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু স্টিয়ারের সঞ্চালনায় এই কর্মশালায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অংশ নেন।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাক খাতে মূল বেতন ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্লোবাল ব্র্যান্ড এবং রিটেইলারদের সুপারিশের ভিত্তিতে ৩ হাজার ৭৮০টি কারখানার সবগুলোর সমীক্ষা শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারখানাগুলো বর্তমানে গ্লোবাল ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা কমিটি রয়েছে, যেখানে শ্রমিক ও কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছেন।
বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন এবং তাদের ৮০ শতাংশই নারী। মোট রফতানির ৮৩ শতাংশই এই শিল্প খাতের জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৮টি কারখানার এলইইডি সনদপত্র রয়েছে। বিশ্বের ১০টি শীর্ষস্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৭টি রয়েছে বাংলাদেশে। এ খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দূষিত পানি শতভাগ শোধন এবং পানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’ (ডব্লিউআরজি)-এর সঙ্গে কাজ করছে।
এ ক্ষেত্রে দূষিত পানি পরিশোধনে বড় অঙ্কের অর্থের ব্যবস্থা করা, আর্থিক ও অর্থবহির্ভূত প্রণোদনা দেয়া, সমগ্র বাংলাদেশে পানির ব্যবহারের লক্ষ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো উন্নত করা, পানি শাসনের জন্য বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা-এ পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যে দেশের শিল্পায়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানায় ‘এ ফ্লুয়েন্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বড় বড় গৃহনির্মাণ কোম্পানিকে বর্জ্য শোধনের জন্য যেকোনো শিল্প স্থাপনের সময় ইটিপি নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবার জন্য নিরাপদ পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার উদ্ভাবনী শক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে খরা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাতের খাদ্যশস্য আবাদের উদ্যোগ নিয়ে দেশের সার্বিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। দেশে এমন জাতের সবজির চাষ হচ্ছে, যা উৎপাদনে পানির প্রয়োজন কম পড়ে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে সুইজারল্যান্ডের আল্পস অঞ্চলের রিসোর্ট শহর ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সভার কার্যক্রম শুরু হয়। ‘রেসপনসিভ অ্যান্ড রেসপনসিবল লিডারশিপ’ শ্লোগানে হচ্ছে এবারের বৈঠক।
ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লস সয়াবের উদ্বোধনী বক্তব্য এবং শাকিরা ও অন্যান্য শিল্পীদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ৪৭তম সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন বক্তব্য দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
বাংলাদেশের কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবারই প্রথম ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর আগে ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তখনকার প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ অংশে নেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক রয়েছেন। খবর বাসসের।