অগ্রসর রিপোর্ট: দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দরপতনের ফলে আবারও পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এতে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রপ্তানি বন্ধের প্রায় আড়াই মাসের মাথায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সোমবার খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, রবিবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পেঁয়াজ টনপ্রতি রপ্তানিতে দাম ৮০০ ডলার বেঁধে দেয় মোদি সরকার। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ থাকবে বলা হয়। তবে তার আগেই গত ৮ ডিসেম্বর ভারত আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে ভারতের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল নাশিকের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ থেকে কমে ১৩ রুপিতে নেমে আসে। দামের এই পতনে পেঁয়াজ চাষিরা দুই মাস ধরে বিক্ষোভ করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এরপরই এমন সিদ্ধান্ত নিল মোদি সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ভারতী পাওয়ার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, পেঁয়াজ রপ্তানির বিস্তারিত আগামী দুই দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে।
পাওয়ার জানান, এই সিদ্ধান্ত পেঁয়াজ চাষিদের জন্য এক বিরাট স্বস্তি হবে। রপ্তানি শুরু হলে পাইকারি পেঁয়াজের দামের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম মিলবে।
এদিকে মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছগন ভুজবল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সহযোগিতা মন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে ৩ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দ্বিপক্ষীয় উদ্দেশ্যে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। বাংলাদেশ ছাড়া তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো- নেপাল, ভুটান, বাহরাইন ও মরিশাস। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে সরকারিভাবে এ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৮ ডিসেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে পরের দিন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজ খুচরায় প্রায় দ্বিগুণ দামে ২২০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে পেঁয়াজ, চিনি রপ্তানির অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। এরমধ্যেই ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্তের খবর এলো।
ভারতীয় পেঁয়াজ ও চিনি আমদানির জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে এলসি খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই ভারতীয় আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ হারুন আজ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আমদানি করে দেশের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবেন।
এদিকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেই দেশের বাজারে দাম কমবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। ভারত যদি রপ্তানি শুল্ক বেশি রাখে তাহলে বাংলাদেশে এর সুফল মিলবে না।
তিনি বলেন, এর আগে ভারত একবার শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গিয়েছিল। এবার যদি সাশ্রয়ী মূল্যে ভারতীয় পেঁয়াজ আসে তাহলে দেশের ভোক্তারা এর সুফল পাবে।