অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই শিল্পটাকে ধরে রাখতে হবে। যেহেতু, বিপুল পরিমান নারী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করেছে এই খাত। গ্রামীণ জনপদে এর বিরাট প্রভাব রয়েছে, কেননা, গ্রামীন জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নেও এটি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।’
শেখ হাসিনা আজ দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরায় নব নির্মিত বিজিএমইএ ভবন কমপ্লেক্স উদ্বোধনকালে এই আহ্বান জানান।
পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং গার্মেন্টেসের কিন্তু নতুন নতুন আইটেমও করা যায়। একেক দেশে একেক রকম চাহিদা। ডিজাইন এবং ফ্যাশন ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন ডিজাইনিং ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে। পোশাক খাত আরও সমৃদ্ধ হোক সেটাই প্রত্যাশা করি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী এবং আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী পারভেজ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন ।
অন্যদিকে উত্তরার নতুন ভবনে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহ-সভাপতি এম এ মান্নান কচি, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সংগঠনটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
নতুন পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানের কূটনীতি কিন্তু অর্থনৈতিক কূটনীতি। প্রতিটি দূতাবাসকে নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ডেকে দীর্ঘ মিটিং করেছি, কোন দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্যের বাজার রয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১০ বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করেছি। মালিকদের জন্য উৎস করে ছাড় দিয়েছি। বাজেটে কর বসাতে পারি না, কিন্তু কমাতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ ভাগে উত্তীর্ণ হবে এ অর্থবছরে। আমাদের মাথাপিছু আয়ও আমরা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত করছি। আমাদের অর্থনীতিকে সব সময় গতিশীল, কিন্তু এটা যেন স্থিতিশীল থাকে সে ব্যবস্থাটা আমরা রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নটা হচ্ছে একেবারে তৃণমূল মানুষের কাছে। মানুষের যেন ক্রয় ক্ষমতাটা বাড়ে এবং দেশে যেন আমার বাজার সৃষ্টি হয় সেই চেষ্টা ও সেই পদক্ষেপ নিয়েছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিজিএমইএ ভবন সম্পর্কে বলেন, ‘আদালতের রায় হয়ে গেছে এই ভবন (কারওয়ান বাজারে অবৈধভাবে নির্মিত) ভেঙে ফেলতে হবে। আদালতের রায় খেলাপ করা যাবে না। আজ নতুন ভবন উদ্বোধন হলো পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কাজ চলতে থাকবে। নতুন ভবনে উৎপাদিত পণ্যের ভালো ডিসপ্লে সেন্টার থাকবে। বিদেশী বা যে কেউ সেখানে গেলে সেগুলো দেখতে পারবে। সুন্দর একটা পরিবেশ হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই জমিটা (কারওয়ান বাজারস্থ ভবন) আমার দেওয়া ছিল। কিন্তু ওই জায়গায় নয়। সোনারগাঁও হোটেলের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়া ছিল। আমি বারবার অনুরোধ করেছি খালের ভেতরে যেন না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা যখন পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসলাম তখন দেখলাম ব্রিজ দিয়ে ভবনে যেতে হচ্ছে। আমাদের এমনিতেই জলাধারের সমস্যা। আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায় না। আমাদের জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।’
রাজধানীর হাতিরঝিলের (কারওয়ান বাজারস্থ ভবন) বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। ভবনটি টিকিয়ে রাখতে বিজিএমইএ নেতারা বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। দীর্ঘ আট বছর মামলায় লড়ে পরাজিত হন তারা। ভবনটি সরাতে একাধিকবার সময় নেয় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।