মঙ্গলবার মরক্কোর মারাকাশের বাব ইগলিতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২২) উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্যে এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সম্মেলনের শীর্ষ এই বৈঠকে ৮০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে আমাদের সবার জন্য নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে।
এ লক্ষ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহায়তার জন্য ‘ওয়াটার এসডিজি’ নিয়ে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
২০৩০ সাল মেয়াদি এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে ষষ্ঠটি নম্বর পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে। এসডিজি-৬ এ সবার জন্য স্যানিটেশন ও পানির সহজলভ্যতা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে।
নিরাপদ পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় সবার অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সম্প্রসারণ, পানি পরিশোধন, দূষিত পানি ব্যবস্থাপনা, পানির অপ্রতুলতা ও কার্যকর ব্যবহার, পানির উৎসসমূহের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, জলজ বাস্তুসংস্থানের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে এতে।
পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটিভিত্তিক অংশগ্রহণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।
বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, পূরণের আহ্বান পুনর্বার জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত অভিবাসনের কথা তুলে ধরে সেদিকে নজর দেয়ার আহ্বানও জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যথাযথভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করলে আমরা কখনোই এসডিজির কাঙ্ক্ষিত ফল পাব না।
কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বছর প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যে চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে সামনের দিকে এগোনোর আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম দিককার দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর এবং তা অনুসমর্থন করেছে বলে বিশ্ব নেতাদের জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ৪০ কোটি ডলারের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ হলেও সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সফলতা অর্জনের কথা বলেন তিনি। আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, সাইক্লোন শেলটার ও উপকূলে গাছ লাগানোর মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলো বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে জানমালের ক্ষতি কমিয়ে এনেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও সম্মেলনে তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অস্তিত্বে ঝুঁকির বিষয়টিতে সবার আরো মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফল আরো প্রকট হচ্ছে। সময় এখন আমাদের বিরুদ্ধে। এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের একজোট হওয়া এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।