নরসিংদী প্রতিনিধি- কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি। একই সঙ্গে অবাধে চীন, পাকিস্তান ও ভারত থেকে কাপড় আমদানির ফলে নরসিংদীতে গড়ে ওঠা পাওয়ার লুম সেক্টর সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো বেহাল। ফলে পাঁচ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে। উদ্যোক্তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার অধিকাংশ পাওয়ার লুম কারখানা গড়ে উঠেছে মাধবদী, শেখেরচর, চৌয়ালা, হাজীপুর, পশ্চিম কান্দাপাড়া, ভাগদী, বাসাইল, রাঙ্গামাটি, সাটিরপাড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, ঘোষপাড়া, ঘোড়াদিয়া, গণেরগাঁও, ভগিরতপুর, আনন্দি, বালুচর, আটপাইকা, নওয়াপাড়া, আলগী, কতোয়ালীরচর, গদাইরচর, নুরালাপুর, কাঁঠালিয়া এবং আলগাপাড়ায়। ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। কর্মরত মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে জেলার এ শিল্পে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। তবে তা কেটেও গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে পাওয়ার লুম সেক্টর দুরবস্থার মধ্যে পড়ে। একই সঙ্গে চীন, পাকিস্তান এবং ভারত থেকে অবাধে কাপড় আমদানিও জেলায় গড়ে ওঠা এ শিল্পকে সংকটগ্রস্ত করেছে। অবাধে কাপড় আমদানির কারণে উদ্যোক্তারা স্থানীয় বাজার হারাচ্ছেন। তাছাড়া সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, খাতকেন্দ্রিক পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকা এবং পুঁজি সংকটে সেক্টরটি হুমকির মুখে পড়েছে।
জেলার টেক্সটাইল শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নান্নু আলী খান জানান, জেলায় ছোট-বড় ও মাঝারি মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার পাওয়ার লুমচালিত কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক ও কর্মচারী সংশ্লিষ্ট। তাদের জীবন-জীবিকা এবং পরিবারের রুটি-রুজিও সংশ্লিষ্ট খাতে জড়িত। কিন্তু এখন উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আবাধে কাপড় আমদানির কারণেও এখন অনেক করখানা বন্ধ। মেসার্স রকিব টেক্সটাইল মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও করিমপুর ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারিছ মিয়া জানান, চলতি বছরে তাদের কারখানায় উৎপাদিত কাপড়ের অর্ধেক অবিক্রীত রয়েছে। কয়েক লাখ মিটার গ্রে কাপড় গুদামজাত রয়েছে। ফলে তাদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। তিনি জানান, দেশে এখন অবাধে বিদেশী কাপড় আমদানি হচ্ছে। রঙ, কেমিক্যালসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদের চাপ বাড়ছে। সব মিলিয়ে জেলার কারখানা মালিকরা সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
মেসার্স মমিন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মো. মমিনুর রহমান মমিন জানান, দেশের বস্ত্র খাতে পাওয়ার লুম শিল্পের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। সরকার এ খাত থেকে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব পায়। কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। কিন্তু এ শিল্পের অগ্রগতি ও উন্নয়নে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। অথচ সরকার একই সময়ে গার্মেন্ট শিল্পের বাজার সৃষ্টি, ভর্তুকি প্রদানসহ ঋণ সুবিধাও দিচ্ছে। সরকারি নীতির কারণেই পাওয়ার লুম শিল্প বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া এক শ্রেণীর আমদানিকারক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ মিটার কাপড় আমদানি করছে। স্থানীয় বাজারে তা স্বল্প মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দেশীয় কাপড়ের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তিনি পাওয়ার লুম সেক্টরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো, ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানোসহ আমদানিকারকদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।