অগ্রসর রিপোর্ট : নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব এবং এতে হয়রানি কমে আসবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, বিদ্যমান আইনে যেসব পণ্যে ভ্যাট রেয়াত আছে, এর সুবিধা গ্রহণের জন্য রাজস্ব কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হত। কিন্তু নতুন আইনে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সেই হিসেবে পুরাতন আইনের তুলনায় নতুন আইন অনেক বেশি ব্যবসাবান্ধব। পাশাপাশি নতুন আইন অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় হয়রানিও কমে আসবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এমন বিশ্লেষণ তুলে ধরে সংস্থাটি। এতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বক্তব্য দেন। বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
চিমিয়াও ফান বলেন, বাজেট অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নে বিপুল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি নির্ভর করছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ওপর। তাঁর মতে, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো হলো বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা, রফতানি বৃদ্ধি, যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রেমিটেন্স প্রবাহ ধরে রাখা।
বিশ্বব্যাংকের বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন ভ্যাট আইন পুরাতন ভ্যাট আইনের তুলনায় ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব এবং অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় হয়রানিও কমে আসবে।সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইন ও পুরাতন আইনের মধ্যেকার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না।তবে দাম বাড়তে পারে এমন অপপ্রচারের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর আঘাত করবে না। কারণ তারা যেসব পণ্য ব্যবহার করে, তার অধিকাংশই ভ্যাটের আওতামুক্ত।এছাড়া নিন্ম আয়ের মানুষেরা যেসব জায়গা থেকে কেনাকাটা করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার কম হওয়ায় ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, সক্ষমতার অজুহাতে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পাঁচ বছর পিছিয়েছে সরকার। আর পেছানো ঠিক হবে না। বাস্তবায়ন শুরু হলে সক্ষমতাও গড়ে উঠবে। তাঁর মতে, আবগারি শুল্ক বাড়ানো ব্যাংকিং খাতে সঠিক সংকেত দিচ্ছে না। যখন আমরা আর্থিক ব্যবস্থার গভীরতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাচ্ছি,তখন এই ধরনের ভুল সংকেত দেওয়া হচ্ছে কেন-এ নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়।
জাহিদ হোসেন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহারের সমালোচনা করে বলেন,এক্ষেত্রে সংস্কার আনার প্রয়োজন রয়েছে। বাজেটে সুদের পেছনে যে ব্যয় হয়,তার ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ দিতে হয় সঞ্চয়পত্রে। তিনি বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণের পরামর্শ দেন।
তিনি আরো বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ছে।সঠিক সময়ে চাল আমদানি করে বাজারে স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন।এ জন্য শুল্ক-কর কমানোর মাধ্যমে আমদানি ব্যবস্থা সহজ করার পরামর্শ দেন তিনি। একইসাথে চাল আমদানির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেন এই অর্থনীতিবিদ।
জাহিদ হোসেন রাষ্ট্রায়াত্ত্ব লোকসানী শিল্পকারখানা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তুকি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারলে, ভর্তুকি দিয়ে কোন লাভ নেই।