অগ্রসর রিপোর্ট : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৪০ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৬ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৩ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৪৯৬ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৪০ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১৪৪ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৯৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৯৬৩ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৮৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭৩৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৪শ’ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৪ হাজার ২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৫৩৩ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৯১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩২৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৪৮ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৩০৮ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৭৬০টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭৯টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৮৮৯ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ২ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ১১৩টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন এবং নারী ৮ জন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৯৭১ জন; যা ৭৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং নারী ৫২৫ জন; যা ২১ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৫ জন, আর বাড়িতে ৪ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, অঞ্চল বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে ৬ জন করে, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ৩ জন করে, বরিশাল ২ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ১ জন রয়েছেন।
এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ২৪২ জন; যা ৪৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৩৯ জন, যা ২৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১১৮ জন, যা ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ১৪৪ জন, যা ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ৯১ জন, যা ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১১৩ জন, যা ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ৮৩ জন, যা ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৬ জন, যা ২ দশমিক ২৪ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিভাজনে দেখা যায়, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, যা দশমিক ৬৮ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২৯ জন, যা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৭৬ জন, যা ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৭৬ জন, যা ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৫৯ জন, যা ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭৪২ জন, যা ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ৯৭ জন, যা ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৮৬ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৩১৯টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৫ জন এবং খালি আছে ৩৭টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১৬ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৪১টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৯ জন এবং খালি আছে ২০টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৭০২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮০৮ জন, খালি আছে ৫ হাজার ৮৯৪টি শয্যা। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৩ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৭৯ জন। খালি আছে ১১৪টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৪টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ১১০ জন এবং খালি আছে ১০ হাজার ৫৫৪টি শয্যা। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৭৪টি, রোগী ভর্তি আছে ২০৩ জন এবং খালি আছে ১৭১টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৭৯টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৬০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১৭টি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেম অনেক হাসপাতালে চালু হয়েছে, অনেক হাসপাতালে চালুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৮৬৭ জন, আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৭শ’ জন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৯৪৭ জন, আর আইসোলশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২১ হাজার ৯১৬ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৩১ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৩৯ জন, আর এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৪ লাখ ৩ হাজার ২৬৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৬৪ জন, আর এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৭ জন। বর্তমানে কোয়ান্টিনে আছেন ৬০ হাজার ৮১২ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ১১ হাজার ৭১৩টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৪টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৮৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ৩ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৯৪২ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৩ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৫ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৩৬৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৩১ হাজার ১৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৭০ জন এবং এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৭০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৫ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৬৪৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ১৭৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৪ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।