অগ্রসর রিপোর্ট : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৩৩তম দিনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
গত ২৪ ঘন্টায় ১০ হাজার ৯২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩২৫ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৩ হাজার ৪৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৩৪ জন। ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৫৮১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১৭ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৫১ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৭৩ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩৮৯ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৬২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৮ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৫ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬৩২ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬৮১ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৩ হাজার ৪৯টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৯২৩ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৬০ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ৯৩৭টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৪০ জন; যা শতকরা হার ৭৯ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং নারী ৫৪১ জন; ২০ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৭ জন; দশমিক ৬৬ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২৯ জন; ১ দশমিক ১২ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৭৮ জন; ৩ দশমিক ০২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৮০ জন; ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৬৭ জন; ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭৭২; ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ১৩৮ জন; ৪৪ দশমিক ০৯ শতাংশ।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, সিলেট বিভাগে ৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৬ জন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ২৬৯ জন; যা ৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৮ জন, যা ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৩৬ জন, যা ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ১৫৬ জন, যা ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ৯৮ জন, যা ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১২০ জন, যা ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ৮৭ জন, যা ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৭ জন, যা ২ দশমিক ২১ শতাংশ।
এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩২ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২ জন বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩২ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৩৯৩টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৩ জন এবং খালি আছে ৩৯টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১২ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২০ জন এবং খালি আছে ১৯টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৭০২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৪৩ জন, খালি আছে ৫ হাজার ৮৯০টি শয্যা। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৩টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯২ জন। খালি আছে ১০৫টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৭২০টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ১৮৭ জন এবং খালি আছে ১০ হাজার ৫৩৩টি শয্যা। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৭৯টি, রোগী ভর্তি আছে ২১৬ জন এবং খালি আছে ১৬৩টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৮০টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৭৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১০৮টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৭৯ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৪৯৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৩১ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২৩ হাজার ৪০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫৩৮ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮১ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৭ হাজার ৩১১ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৩১৪ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৯ হাজার ৬৯৩ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৪টি, মজুদ আছে ১১ লাখ ১২ হাজার ৭২০টি। বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৪০৪টি, মজুদ আছে ৬৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪৪টি। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬টি, মজুদ আছে ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৩টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ২৩৮টি, ১২ লাখ ৩১ হাজার ৪২১টি মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ৯৭ হাজার ২০৩টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৯৮টি ফোন কল রিসিভ করে টেলিমেডিসিন, স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯২ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ৩ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৫৯৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।