স্টাফ রিপোর্টার: দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ, উৎসবমূখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। ভোট গণনার কাজও শুরু হয়েছে।
সকাল ৮ থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। প্রায় ১২ হাজার প্রার্থী এই নির্বাচনে লড়ছে।এরমধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৯৪৫ জন।
শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১জন নিহত হয়েছে। মাদারীপুরের কালকিনি ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ৫ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীর মাদবদী, বরগুনা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, ঝালকাঠির নলছিটি, ঠাকুরগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় ভোটকেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে নির্বাচনী এলাকায় টহল দিয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ ১ লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সঙ্গে ছিলো নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
কমিশনের শেষ মুহূর্তের নির্দেশনায় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল পাঠাতে বলা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২২৯টি পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাকি ৬ উপকূলীয় পৌরসভায় কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পৌরসভা এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বিজিবি-র্যাব-কোস্টগার্ড ও পুলিশ। ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট দেয়া, ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। এ নির্বাচনে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ন আনসার রয়েছে। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বে ও অপরাধ দেখভালে মাঠে রয়েছে সর্বমোট ১ হাজার ২০৪ জন নির্বার্হী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এ নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ২১ হাজার ৫৭১টি। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৫৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯৪৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলো। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ছিল ১১ হাজারের বেশি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার ভোটে মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে নৌকা-ধানের শীষ নিয়ে ২২২ প্রার্থী। নারী মেয়র প্রার্থী ২০ জন ভোটে রয়েছে। ২০টি দল অংশ নিচ্ছে । এর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৮৮ জন। অবশ্য ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ২২৮ জন ও বিএনপির ২২৫ জন ও জাতীয় পার্টির ৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী।
মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ দুই প্রধান দল কয়েকটি পৌরসভায় মুখোমুখি না থাকলেও শরিকদের সঙ্গে লড়ছে। নির্বাচনে অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এছাড়া এলডিপি ১ জন, জেপি ৬ জন, সিপিবি ৪ জন, ন্যাপ একজন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ জন, বিকল্পধারা ১ জন, জাসদ ২১ জন, বাসদ একজন, তরিকত ফেডারেশন ১ জন, এনপিপি ১৭ জন, পিডিপি একজন, ইসলামী ঐক্যজোট ১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন, খেলাফত মজলিসের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।
ইতোমধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সকাল থেকে নির্বাচন কমিশনে অবস্থান করে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম, বিএনপি নেতা ওসমান ফারুক ও জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম এমপি’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কমিশনে অবস্থান করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।