মঙ্গলবার শাহবাগ থানা পুলিশ বিষয়টি রাইজিংবিডির কাছে স্বীকার করলেও গোয়েন্দা পুলিশ এখনো এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। আর ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ কমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে রাইজিংবিডিকে জানান।
শাহবাগ থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ চলাকালে শাহ আলম নামে এক যুবক পিঠে একটি ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশের তল্লাশিকালে একটি চাপাতি পাওয়া যায়। পরে তাকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। থানায় অবস্থানকালে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই হিসেবে তাকে সোমবারই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ওই সূত্রটি আরো জানায়, ওই যুবক সম্ভবত উচ্চ শিক্ষিত। সম্ভবত বেশ কয়েকজন মিলে তারা সমাবেশে প্রবেশ করেছিল। তবে একজন আটক হওয়ার পর অন্যরা কোথায় যায়, পুলিশ তা জানতে পারেনি। আর যেহেতু দুদিন আগেই চাপাতি দিয়েই প্রকাশক ও ব্লগারদের ওপর হামলা করা হয়েছে, সেহেতু এসব বিষয় মাথায় রেখে শাহ আলমকে থানায় না রেখে ডিবির অধীনে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে তিনি জানান, শাহ আলম নামে এক যুবককে চাপাতিসহ আটক করা হয়। তবে তাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করবে- মর্মে ডিবির অধীনে রাখা হয়েছে।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে গোয়েন্দা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন না বলে ফোন রেখে দেন।
তবে গোয়েন্দা পুলিশের অন্য একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে জানান, এরই মধ্যে ওই যুবজককে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। সিসি টিভির ফুটেজগুলোতে তাকে খোঁজা হয়েছে। সিসি টিভিতে যারা রয়েছে, তাদের কাউকে চেনে কিনা সে জন্যও তাকে ফুটেজ দেখানো হয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হতে পারে। যা দিয়ে অনেকগুলো হত্যার ক্লু বের হতে পারে।
বিশেষ করে লাখো লোকের সমাবেশে কেন সে চাপাতি নিয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাবেশে কাউকে টার্গেট করে প্রবেশ করতে চেয়েছিল কি না অথবা আরো কারা সমাবেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে, তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাবেশের ভেতরে ঢুকে কী করতে চেয়েছিল অথবা কী পরিকল্পনা করেছিল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ৩১ অক্টোবর দুপুরের পর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে বই কেনার নাম করে প্রবেশ করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এরপর সুযোগ মতো প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল, ব্লগার তারিক রহিম ও রণদীপম বসুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে মারাত্মকভাবে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।
ওই দিন প্রায় একই সময়ে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে অফিস কক্ষের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা। দীপনের স্বজনরা তাকে ফোনে না পেয়ে তালা ভেঙে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন দীপনের ময়না তদন্তের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
ঘটনার দুই দিন পর দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। একই দিন বিকেলে মোহাম্মদপুর থানায় টুটুলের ভাইরা ভাই সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন। সবশেষ মঙ্গলবার মামলা দুটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।