অগ্রসর রিপোর্ট: তথ্যপ্রমাণ পেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধেই সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার লোক হোক না কেন।’
শনিবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ফল-২০১৯-এর ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠলে কঠোর মনোভাব দেখান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশের পর পদত্যাগ করেন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতা। ওই বৈঠকে যুবলীগের কয়েক নেতার কর্মকাণ্ডেও অসন্তোষ ঝরে তার কণ্ঠে।
এরপর যুবলীগের নেতাদের জুয়ার আখড়া চালানোর খবর চাউর হওয়ার মধ্যে বুধবার ঢাকায় চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতাকে। এরপর গতকাল রাজধানীতে নিকেতনে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা জি কে শামীমকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ মনে করেন। তারই নির্দেশনায় একের পর এক যারা দুর্নীতি করছেন, নিয়ম ভাঙছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন কিংবা অবৈধভাবে কোনও ঘটনা ঘটাতে চাচ্ছেন সেগুলোকে লক্ষ্য রেখে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। অভিযান চলছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের নাম গণমাধ্যমে আসছে এ ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যার (সম্রাট) নাম বলছেন সে ছাড়াও আমাদের সরকারের অন্য কেউ কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ালে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কাউকে ছাড়ছি না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাব তাকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
জি কে শামীমের বিষয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘শামীম কিভাবে এতগুলো টেন্ডার পেয়েছে সেটি অন্য বিষয়। তার বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ হাতে আসছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ-আমরা যেভাবে এগিয়ে চলছি ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’ বা টেকসই উন্নয়নের জন্য সাসটেইনেবল পিচের দরকার, সাসটেইনেবল পিচ যদি পেতে হয় তাহলে সাসটেইনেবল সিকিউরিটি দরকার। সেই সিকিউরিটি আমরা নিচ্ছি। যেখানে দুর্নীতি, যেখানে নিয়ম ভঙ্গকারী যারাই আছে তাদেরকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করব। কেউ আনপানিস্ট (শাস্তি থেকে বাদ) যাবে না।’
‘ইতিমধ্যে অনেক উন্নয়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে হয়েছে। আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একটি সুন্দর বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই। যেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র, নিপীড়ন ও অত্যাচার থাকবে না। সেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা মাথা উঁচু করে চলবে, তারা বলবে আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আজকের বাংলাদেশের অবস্থান আর দশ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পার্থক্য রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন- তিনি বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। আমরা সেদিন বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব। তখন অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তব।
সোশ্যাল মিডিয়ার কথা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের উত্থানে দানা বেঁধেছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি, এই মাদকের বেচাকেনা কিংবা বিস্তার লাভ করার পেছনেও সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে। প্রযুক্তি আমাদের ব্যবহার করতেই হবে কিন্তু এর খারাপ দিকটা দেখে ভেবেচিন্তে সবাই কাজ করবে এটাই তার আহ্বান। জঙ্গিবাদ দমনে আমরা হিমশিম খাচ্ছিলাম। পরে সবার সহযোগিতায় জঙ্গি দমন করতে সক্ষম হয়েছি। নতুন প্রযুক্তি সাইবার ক্রাইম করে অনেকেই পার পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু আমাদের নতুন সাইবার ক্রাইম ইউনিট তাদেরকে মোকাবেলা করছে।