অগ্রসর রিপোর্ট: অবশেষে দৈনিক ডেসটিনি সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
রোববার ডেসটিনির এই শীর্ষ দুই কর্ণধারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এই জামিন বহালের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ জামিন বহালের আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়, আদেশ প্রদানের ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল)-এর সারাদেশে লাগানো গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর জমা দিতে হবে। অন্যথায় ছয় সপ্তাহের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নগদ জমা দিতে বলা হয়েছে। শর্ত পূরণের জন্য গাছ বিক্রি ও টাকা সংগ্রহের জন্য ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর চেয়ারম্যানকে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডেসটিনি গ্রুপের সিইও, চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য সরকারসংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ডেসটিনির পক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। গত ২০ জুলাই ২০১৬ বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুছ এবং বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়া সাপেক্ষে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ২৪/০৭/২০১৬ইং তারিখে জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করলে চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দারের আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ প্রধান বিচারপতির আদালতে পাঠিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিলেড ডিভিশন গত ৩১ জুলাই ২০১৬ জামিন স্থগিত করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা দায়ের করে। উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলায় মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইন ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন।
এদিকে ডেসটিনির শীর্ষ দুই কর্ণধারের জামিনের খবরে দেশজুড়ে ডেসটিনির সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক লক্ষ বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা-পরিবেশক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা দেশজুড়ে অবস্থিত নেট অফিসে জড়ো হয়ে মিলাদ মাহফিল ও শুকরানা দোয়া আদায় করেন। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে সংকটের মুখেও এসব বিনিয়োগকারী অবিচল থেকে ডেসটিনির দুই শীর্ষ কর্ণধারের মুক্তি দাবি করে আসছিলেন। তারা বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করে বলে আসছিলেন, আমরা টাকা ফেরত চাই না, আমাদের দুই শীর্ষ কর্ণধারকে মুক্তি দিন। আজ তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় অনেকে আনন্দে আবেগে কেঁদে ফেলেন। ডেসটিনি গ্রুপের সাথে জড়িত ৪৫ লাখ গ্রাহক ও তাদের পরিবার-পরিজন প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে বেকারত্ব ও আর্থিক সংকটের মুখে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। তারপরও তারা ডেসটিনির দুই শীর্ষ কর্ণধারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। উপরন্তু তারা তাদের মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন। তারা আদালত ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
এদিকে ডেসটিনির এই দুই শীর্ষ কর্ণধার মুক্তি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দৈনিক ডেসটিনিতে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা মনে করছেন, দৈনিক ডেসটিনি সম্পাদক, ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিনের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন আরো শক্তিশালী হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।