শেষ মুহূর্তে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ঘরে ফেরা যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সোমবার বিকাল থেকে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পাঁচ দিনের ছুটি শুরুর এক দিন আগেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকেই। তবে গরমের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাজধানী থেকে বের হওয়ার পর মহাসড়কগুলোর মধ্যে উত্তরবঙ্গ যেতে সাভার-নবীনগর-চন্দ্রা, আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও নবীনগর- আরিচা মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টে যাত্রী আর যানবাহনের চাপ ছিল। তবে অন্যবারের মতো এবারও যাত্রীদের অভিযোগ, গন্তব্যে পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের ভিড় :গতকাল দুপুর থেকেই কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। এর আগে গত ৪ এপ্রিল থেকে টিকিট দেখে যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দিলেও সোমবার অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেই সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফরে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহী, জামালপুর, সিলেট, রংপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, চিলাহাটিগামী ট্রেনগুলোতে বিনা টিকিটের যাত্রী দিয়ে ভরে যায়। এতে টিকিটধারী অনেক যাত্রীই তাদের নির্ধারিত আসন পর্যন্ত যেতেই পারেননি। কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ঐসব ট্রেন বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আসার পর শত শত যাত্রী ট্রেনের ছাদে চড়েন। প্রতি বছরের ঈদে ঘরে ফেরার সেই চিরচেনা দৃশ্য ফিরে আসে। বিকাল ৫টার দিকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন থামার পর কয়েক শ যাত্রী ট্রেনটির ছাদে চড়েন। ট্রেনের প্রতিটি কোচ দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী দিয়ে ঠাসা ছিল। সন্ধ্যার দিকে জামালপুরগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনটিতেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। রাতে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস, সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস, যশোরগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেসসহ বেশির ভাগ ট্রেনের ছাদে যাত্রী দেখা গেছে।
ঈদযাত্রায় ট্রেনে নাশকতা বা সহিংসতার কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গতকাল সোমবার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঈদযাত্রা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ।
খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতার তথ্য নেই। দেশের বড় বড় স্টেশনগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, র্যাবের সব ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। ঈদযাত্রায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিভিন্ন বাহিনীর নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়োজিত আছেন।
এদিকে সোমবার বিকালের পর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সেই চিরচেনা রূপ ফিরে আসে। ভোলা, পটুয়াখালী, মনপুরা, হুলারহাট, হাতিয়া, চাঁদপুর ও বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল।
সড়কপথে অতিরিক্ত ভাড়া :গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বের হয়ে আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর, নয়ারহাট এলাকায় মহাসড়কে বাসের ভিড় লক্ষ করা গেছে। এসব এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে গন্তব্যের টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। রংপুরগামী যাত্রী বেলায়েত হোসেন বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়া কেউ মানছে না। যে যেভাবে পারছে ভাড়া হাঁকাচ্ছে। তাদের কাছে যাত্রীরা অসহায়। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন খোলা ও মালবাহী ট্রাকে।
ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের চালক বাদল জানান, সোমবার বিকালের দিকে রাজধানী থেকে বের হতে কিছুটা যানবাহনের চাপ ছিল। এছাড়া বাইপাইলে কিছুটা আর চন্দ্রা ঢুকতে যানবাহনের জটলায় পড়তে হয়েছে। তবে কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়নি। তবে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে চক্রবর্তী মোড় পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে বাসগুলো থেমে থেমে চলছে উত্তরবঙ্গমুখী।