প্রতিটি সিটি করপোরেশন তো বটে, পৌরসভাগুলোয়ও ট্রেড লাইসেন্স ফি সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোনো ধরনের আলোচনা এবং ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ছাড়াই ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন ফি বাড়ানো হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ক্ষেত্র ও স্থানভেদে এটি পাঁচ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাটাগরি ও শ্রেণীর সংখ্যা বাড়িয়ে ২৯৯টি করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বেড়ে ওঠা ব্যয় মেটাতেই এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে বলে ধারণা। এতে তাদের আয় বাড়বে বটে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। নতুন শ্রেণীবিভাজন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার ভাঙারি দোকানিকেও ফি পরিশোধ করে ব্যবসা করতে হবে।
সাধারণত পাঁচ বছর পর পর ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়ানো হয়। ফি বাড়ানো নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নানা কারণে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ না করায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। এ সময়ে ফির পরিমাণ বহুগুণ বাড়ানো যৌক্তিক হয়েছে কিনা, তা বিবেচনার দাবি রাখে। সরকার ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মসূচি ঘোষণার আগেই আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফি এমনভাবে ধার্য ও আদায় করতে হবে, যেখানে ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগেই সেটি পরিশোধ করে লাইসেন্স নবায়ন করেন। পাশাপাশি তদারকিও জোরদার করতে হবে। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে অনেক ব্যবসায়ী লাইসেন্স নবায়ন করতে চাইছেন না। এটিও কাম্য নয়। পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আগেই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রেণীর সংখ্যা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। অধিক ক্যাটাগরি হলে ব্যবসায়ীরা জটিলতায় পড়ে যেতে পারেন। এতে তাদের হয়রান হওয়ার সুযোগ বেড়ে ওঠে। এমন একটি আধুনিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে প্রত্যেক ব্যবসায়ী নিজ গরজেই যথাযথ ফি পরিশোধ করে নতুন লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করবেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্ধিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, সারচার্জ আরোপ করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। ঢাকা চেম্বার মনে করে, নগরবাসী এখনো আধুনিক নগর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই কর বৃদ্ধির আগে উন্নত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, যা এখনো তারা পুষিয়ে উঠতে পারেননি। তাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ কম। এক্ষেত্রে সরকারও পড়েছে উভয় সংকটে। একদিকে বর্ধিত আয়ের প্রশ্ন, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবির অবস্থা। এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় বিধানই এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। আমরা চাইব, ব্যবসা-সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে নেয়া হবে। একই সঙ্গে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন প্রক্রিয়া আরো সহজ করা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন, লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি অর্থ না দিলে কাগজ মেলে না। ঝামেলা এড়াতে ও সময় বাঁচাতে অনেকে করপোরেশনের কর্মী-দালালদের হাতেই বাড়তি অর্থ দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণ করেন। পরিস্থিতির উন্নয়নে দুর্নীতি ও ঘুষের এ প্রবণতা রুখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই নির্দিষ্ট ফি দিয়ে লাইসেন্স পাওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও করতে হবে উন্নত। ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনকে অর্থ দিলেও জলাবদ্ধতা, আর্জনা থেকে মুক্তি, এমনকি ব্যবসার নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। প্রকৃতপক্ষে সেবার মান না বাড়িয়ে ফি ও কর বাড়ানো অযৌক্তিক। রাজস্ব আয় বাড়াতে ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় এনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যদিও স্থানীয় মাস্তান ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি থেকে এদের সুরক্ষা দিতে কখনই কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। এদিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।