আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে, প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার বাসনার কথা জানিয়ে ভোটারদের সামনে হাজির হওয়ার অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চেনে সবচেয়ে রঙদার, সবচেয়ে জাঁকালো ধনকুবের হিসেবে।
নারী কেলেঙ্কারি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড-মন্তব্য, বদমেজাজী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাবসহ কোনো অভিযোগই তাকে আটকে রাখতে পারল না। ‘প্রমিথিউস আনবাউন্ড’-এর মতো ট্রাম্প ‘আনবাউন্ড’ ছিনিয়ে নিলেন বিজয়।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যা হলো তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে ‘ট্রাম্প-কোয়েক’ বা ‘ট্রাম্পকম্প’।
সত্যিই তো ‘কাঁপিয়ে দিলেন’ ট্রাম্প। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে জয়ের জন্য ২৭০টি ভোটের প্রয়োজন ছিল ট্রাম্পের। ইতিমধ্যে পেয়েছেন ২৭৬টি। অথচ এ রকমটি হওয়ার কথা ছিল হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে। অথচ তিনি পেলেন মাত্র ২১৮টি ইলেক্টোরাল ভোট। নির্বাচনের আগের দিনও কেউ কল্পনা করেননি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। অথচ হলেন তাই।
নির্বাচনপূর্ব বিভিন্ন জরিপে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পের চেয়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন হিলারি।
জরিপ অনুযায়ী, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নর্থ ক্যারোলিনায় জয় পাবার কথা ছিল হিলারি ক্লিনটনের। অথচ তাকে হটিয়ে সেখানে স্পষ্ট ব্যবধানে জয় পেলেন ট্রাম্প। জর্জিয়া, ওহাইও, মিশিগান, নিউ হ্যাম্পশায়ার, অ্যারিজোনা, উইসকনসিল এমনকি পেনসিলভানিয়ায়ও পাত্তা পেলেন না হিলারি।
শুধুই কি এ কয়টি রাজ্যে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় নয়! ৫০টি রাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যে ৩০টিতে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। আর মাত্র ২১টিতে জয় পেয়েছেন হিলারি। ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও ইলিনয় বাদে বলার মতো তেমন কোনো রাজ্যই জয় করতে পারেননি হিলারি।
মার্কিন নির্বাচনে অর্থের ভূমিকা খুবই বড়। সেখানকার নির্বাচনে বড় ধরনের ভূমিকা থাকে মিডিয়ারও। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলেছিল, যে এবারের নির্বাচনে অর্থের চেয়ে প্রযুক্তির ভূমিকা বড়।
ট্রাম্পের উত্থানের পর প্রযুক্তির ভূমিকার কথা আবারো আসছে আলোচনায়। আলোচনায় আসছে সাড়া জাগানো বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস। অনেকেই মনে করছেন, হিলারি সংক্রান্ত নথি ফাঁসের মধ্য দিয়ে উইকিলিকস-ই কি তবে হিলারির হারে মুখ্য ভূমিকা পালন করল?
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। কোন প্রার্থী কত বেশি ভোট পেলেন তার চেয়ে জরুরি হলো কে কতটা ইলেক্টোরাল ভোট পেলেন তা।
৫৩৮ জন ইলেক্টোরের সমন্বয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে এর মধ্যে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়। এক এক স্টেটে ইলেক্টোরের সংখ্যা এক এক রকম। নির্বাচনের দিন মার্কিনিরা যখন ভোট দেন তখন তারা মূলত প্রার্থীদের ইলেক্টোরদের বাছাই করেন। দুটি ছাড়া বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে ‘উইনার-টেক-অল’ সিস্টেম চালু রয়েছে। এর আওতায় জয়ী প্রার্থীকে ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট দিয়ে দেওয়া হয়। তবে নেবরাস্কা ও মেইন অঙ্গরাজ্য দুটি এক্ষেত্রে আলাদা। এ দুটি অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পাওয়া ভোটের সংখ্যানুপাতে ইলেক্টোরাল ভোট ভাগ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে এবং পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ঐতিহাসিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণ। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ওভারসিজ ভোটারদের আগাম ভোট এবং ১শ’ ভোটারের কম জনসংখ্যার ৩টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সব অঙ্গরাজ্যে এ ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন ১০০ আসনবিশিষ্ট সিনেট ও ৪৩৫ আসনবিশিষ্ট হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভেরও ভোটগ্রহণ হয়েছে। হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভে রিপাবলিকানরা আবারো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।