অগ্রসর রিপোর্ট : টিকা গ্রহনে ভীতি দূর করতে হবে। সেই সাথে টিকা বন্টনেও সার্বজনীন নীতি মানতে হবে। টাকা যার, করোনার টিকা তার, এমনটা যেন না হয়। এমন মন্তব্য করেছেন হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা হোসেন চৌধুরী ওরফে লেলিন চৌধুরী।
করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদানে কোন কোন বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. লেলিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দেশের মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ভীতি এবং গুজব দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর নানা দেশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যু, সবকিছু মিলিয়ে এমন দ্বিধা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম কাজ যেটা করা দরকার তা হচ্ছে, মানুষের এই দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর করার জন্য কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। যার মধ্যে একটি উদ্যোগ হচ্ছে, প্রথম দিকে যাদের টিকা দেওয়া হবে তাদের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত মানুষজন যেন থাকে।
টিকা নেওয়ার পর তারা সুস্থ থাকলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, ২৬ জানুয়ারি থেকে একটি অ্যাপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হবে।
অ্যাপের মাধ্যমে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া যথাযথ হবে কিনা এই বিষয়ে আমাদের কিঞ্চিৎ আশঙ্কা আছে। কারণ আমাদের দেশে প্রচুর সংখ্যক মানুষ প্রযুক্তিবান্ধব জীবন যাপন করে না। আবার অনেকেই বয়সের কারণে প্রযুক্তি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভয় পান। আবার অনেকেই কম শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত হওয়ার কারণে প্রযুক্তিবান্ধব নয়। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষ অ্যাপ দিয়ে নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণে আগ্রহী হবে না। এর ফলে মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি হয়ে যেতে পারে। কোনও কারণে অ্যাপের সার্ভার ডাউন করে কিংবা অ্যাপ হ্যাং হয়ে গেলে কীভাবে এই কর্মসূচি চালু রাখা যায় সেই বিষয়েও বিকল্প একটা ব্যবস্থা রাখা দরকার।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দিনে দুই লাখ মানুষকে টিকাদানের একটি টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্থাৎ মাসে ৬০ লাখ। এটা একটা ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এর আগে আমাদের এমন অভিজ্ঞতা নেই। এই কারণে টিকা দানের জন্য একটি বড় আকারের মহড়ার আয়োজন করা দরকার। মহড়ার সময় আমরা যেন বুঝতে পারি কোন কোন জায়গায় আমাদের সমস্যা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে আরেকটি আশঙ্কা রয়েছে, সেটা হচ্ছে যারা বিভিন্নভাবে ক্ষমতার উৎসের সঙ্গে জড়িত, তারা সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে অতিরিক্ত কোনও সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। এটা আমরা বিগত সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্য করেছি, এবার যেন সেই বিষয়টা না ঘটে।
আরও একটি বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস বেসরকারিভাবে যে টিকা আনছে, সেগুলোও যেন সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে বিতরণ করা হয়। টাকা যার টিকা তার, এমনটা যেন না হয়। সেখানেও যেন ন্যায্যতার কোনো বরখেলাপ না হয়। করোনাকালে অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও দুর্নীতি আমরা দেখেছি। টিকা কর্মসূচি যেন ন্যায্যতার ভিত্তিতে, সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত করা যায়। তাহলে আমরা বলতে পারব, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।