ঝালকাঠি প্রতিনিধি : দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ দুই সদস্য’র বিশিষ্ট কমিটি দিয়ে চলছে ঝালকাঠি জেলা যুবদল বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের প্রানশক্তি হিসেবে পরিচিত যুবদলের এই ভঙ্গুর অবস্থায় হতাশ ও চাপা ক্ষোভে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
ঝালকাঠি জেলা যুবদলের কয়েকজন ত্যাগী নেতারা জানায়, সর্বশেষ ২০১২ সালে ঝালকাঠি জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। এতে স্ব-ঘোষিত দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি করা হয় কামরুল ইসলামকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন শামীম তালুকদার। এরপরে পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর আলোর মুখ দেখেনি। দুই সদস্য’র এই কমিটি পাঁচ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রামের নামে শুধু ফটোসেশন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ত্যাগী নেতাদের ।
এদিকে এই দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ঝালকাঠি যুবদলে শুরু হয় গ্রুপিং। দলের প্রভাবশালী একটি অংশ রবিউল হোসেন তুহিনের নেতৃত্বে পাল্টা আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে । এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একবার সংঘর্ষও হয় দুই গ্রুপের মধ্যে। বিদ্রোহী গ্রুপটিকে সমর্থন দেয় জেলা বিএনপি। যে কারণে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে যায় কামরুল-শামীমের দুই সদস্য’র কমিটি।
কামরুল-শামীম কমিটি জেলা বিএনপির কার্যালয় কোন সভা সমাবেশে করতে পারেনা। তারা শহরের কামাড়পট্টিতে বিকল্প একটি কার্যালয় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায়সারা আন্দোলন সংগ্রামের নামে মাঠে রয়েছে বলে দাবী অনেকের। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে যুবদলকে এখন ঝালকাঠি বিএনপির অংগ সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল বিবেচনা করা হয় বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন যুবদলের কর্মী হিসেবে কাজ করা নেতাকর্মীরা জানান, এত বছরেও জেলায় কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় তারা এখন হতাশ। ছাত্রদল থেকে আসা নেতাকর্মীরাও যুবদলে কোন পদ না পাওয়ায় হতাশায় ভূগছেন।
জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন অতীতে ঝালকাঠিতে বিএনপির হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী সফল না হবার পিছনে যুবদলের নিস্ক্রিয়তা একটি উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে বিবেচিত। দলে পদ পদবি না থাকায় যুবদলের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামতে চায় না। এদিকে নলছিটি যুবদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলা যুবদলের সভাপতি কামরুল ইসলাম নলছিটিতে আ’লীগ ঘেষাঁদের মূল্যায়ন করায় মামলা-হামলার শিকার হওয়া প্রকৃত নেতাকর্মীরা এখন হতাশর মধ্যে রয়েছেন। আর এসব কারণে গত ৩১ মে নলছিটিতে যুবদলের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে তিন নেতা-কর্মী আহত হন।
যুবদলের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক রবিউল হোসেন তুহিন বলেন, বর্তমান কমিটির কামরুল-শামীম কখনওই যুবদল করেনি। এই কমিটি ঘোষণা করার আগে তারা কোথাও যুবদলের কর্মী হিসেবেও ছিলেন না। কামরুল-শামীম কমিটির সাথে যুবদলের সাধারণ নেতা কর্মীদের কোন সম্পর্ক নেই। গত ৫ বছরে জেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে কোন কমিটি করতে পারেনি এ কমিটি। যে দুই-একটি এলাকায় কমিটি করেছে তাও আবার সুবিধাবাদী ও আওয়ামী পন্থিদের নিয়ে করা হয়েছে বলে জানান যুবদলের এ নেতা।
অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা যুবদলের সভাপতি এম কামরুল ইসলাম বলেন, দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করার দুই মাসের মধ্যে আমি পূর্ণাংগ কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দেই। কিন্তু তৎকালীন সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ধনাঢ্য ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ও মিয়া আহম্মেদ কিবরিয়ার অনুগত লোকজনকে কমিটি দিতে চাওয়ায় সে সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতানৈক্যের কারণে আর পূর্ণাংঙ্গ কমিটি অনুমোদন করানো সম্ভব হয়নি।
যুবদলের কমিটি প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, যুবদলের কথিত এই দুই সদস্য’র কমিটি জেলা বিএনপি ও এর অন্য অংঙ্গ সংগঠনের কেউ কখনোই মেনে নেয়নি। ওই কমিটির অধিকাংশ লোক আওয়ামী পন্থি। এ বিষয়টি বুঝতে পেরে তৎকালীন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও আর অনুমোদন দেননি।
এ ব্যাপারে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে এবং অধিকাংশ সময় সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক জেলে থাকার কারণে এ ঝালকাঠি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে জেলা কমিটি গঠন করার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাই শিগ্রই এ জেলায় নতুন কমিটি দেয়া হবে বলেও জানান কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি।