স্মৃতি বলেন, ‘সেসময় তার গুলিতে আহত ফতেখাঁ গ্রামের জামায়াত ক্যাডার হেফজসহ আরও দুর্র্ধষ জামায়াত ক্যাডাররা লিটনকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে এবং মোবাইল করে দীর্ঘদিন থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। ৩১ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় লিটনকে গুলি করে নির্মম হত্যা করেছে তারাই।’ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন,‘গোলাম আজমের জামায়াত-শিবিরের খুনিরাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছোঁড়ার একটি পরিকল্পিত মিথ্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমপি লিটনের লাইসেন্সকৃত রিভলবার ও শর্টগান জব্দ করে নেওয়া হয়। খুনি জামায়াত-শিবির চক্র জানতো তার বাড়িতে তাদের প্রতিরোধ করার মতো কোনও অস্ত্র নেই। সেই সুযোগে বাড়িতে এসে পরিকল্পিতভাবে খুনিরা তাকে হত্যা করতে সাহস পেয়েছে।’
স্মৃতি বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেলে অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতো। এছাড়া তার বাড়িতে রাতে পুলিশ প্রহরারও ব্যবস্থা ছিল। সাধারণত সন্ধ্যার আগেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এমপি লিটন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন তার অফিসে গিয়ে বসতেন এবং রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সেখানে থাকতেন। কিন্তু কেন জানিনা সেদিন কোনও নেতাকর্মী তার বাড়িতে ছিল না। বাড়িতে শুধু তিনি তার ভাই সৈয়দ বেদারুল আহসান বেতার, ভাগ্নি শিমু, চাচি এবং বাড়ির কেয়ার টেকার ইসমাইল, ইউসুফ ও সৌমিত্র ছিলেন। ’
এসময় তিনি ও তার ভাই বাড়ির উঠোনের রান্না ঘরের কাছে ছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান এবং লিটন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘ওরা আমাকে গুলি করেছে, আগে ওদের ধরো।’
স্মৃতি বলেন,‘এসময় তিনি বুকে হাত দিয়ে ছিলেন এবং বুকের বাম পাশ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এমপির চিৎকার শুনে এবং আততায়ীদের ছুটে যেতে দেখে বাড়ির সামনে থাকা ড্রাইভার গাড়ি নিয়েই তাদের ধাওয়া করেন।’ আহত লিটনকে নিয়ে স্মৃতি, ইসমাইল ও বেতার গাবগাছ তলায় বেরিয়ে আসেন। ড্রাইভার ও গাড়ি না থাকায় একটি মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আহত লিটনের কথা মতো তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এরমধ্যেই ড্রাইভার ফিরে আসেন এবং গাড়িতে করেই এমপি লিটনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে লিটনের স্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জে দলীয় কোনও কোন্দল নেই। লিটন এমপি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তবে তার একমাত্র শত্রু ছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরচক্র। ’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমপির শ্যালক সৈয়দ বেদারুল ইসলাম বেতার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যে দু’জন খুনি লিটনের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে ঘরে ঢোকেন, তারা গিয়ে সামনের সোফায় বসে পড়েন। খুনিদের মুখ খোলা থাকলেও মাথা ও কান মাপলারে ঢাকা ছিল এবং তাদের পরনে ছিল কালো জ্যাকেট ও কালো প্যান্ট। তারা বহিরাগত ছিল না, কারণ তারা গাইবান্ধা এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল।’
তিনি আরও বলেন,‘‘গুরুতর আহত লিটনকে নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে তার শেষ কথা ছিল, ‘স্মৃতি, হাসপাতাল আর কতদূর।’ এরপর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।’’
প্রসঙ্গত, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গত শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।