প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিবৃতি হুবহু তুলে ধরা হলো-
জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক একটি বিবৃতি জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এতে তিনি অভিযোগ করেছেন, “তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত মাহমুদকে জাতীয় প্রেস ক্লাব দলীয়করণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ আদৌ সত্য নয় উল্লেখ করে সোমবার প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবে কোনো প্রকার দলীয়করণ হয়নি। প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ মনে করে, বিএনপি নেত্রী তার দলীয় সূত্রে প্রাপ্ত ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ওই মন্তব্য করেছেন।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাতিষ্ঠানিক গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রেস ক্লাব পরিচালনা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে পূর্ণাঙ্গভাবে সক্রিয় এবং তিনি বর্তমানে একটি থানা বিএনপির আহ্বায়ক। তার গ্রেফতার রাজনৈতিক কারণে, যা পুলিশ কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করেছে। তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আনীত যাত্রাবাড়ি ও অন্যান্য স্থানে নাশকতার বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার উল্লেখ রয়েছে এবং কয়েক ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৪-এর ডিসেম্বরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে সময়কার ব্যবস্থাপনা কমিটি বিভিন্ন অজুহাতে তা করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে প্রেস ক্লাবের সিনিয়র দশজন সদস্য যারা বিভিন্ন সময়ে ক্লাব এবং ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ছিলেন : সর্বজনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, গোলাম সারওয়ার, খোন্দকার মনিরুল আলম, হাসান শাহরিয়ার, শওকত মাহমুদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, এম এ আজিজ, কুদ্দুস আফ্রাদ ও রুহুল আমিন গাজী। এই কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যেহেতু প্রেস ক্লাব নির্বাচনের উদ্দেশ্যে প্রণীত ভোটার তালিকায় প্রচুর গরমিল রয়েছে এবং ক্লাব পরিচালনায় বিগত কমিটিগুলো ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে সেহেতু আগামী একটি টার্মের (দুই বছর) জন্য ক্লাব ব্যবস্থাপনায় একটি সমঝোতা কমিটি গঠন করা হবে, ওই কমিটি সর্বজনগ্রাহ্য একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন, যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূরীকরণের ব্যবস্থা করবে।
ক্লাবের দুইটি ফোরাম হতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সদস্যদের নিয়ে ওই সমঝোতা কমিটি গঠিত হবে। দশ-সদস্য কমিটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কয়েকটি সভা করে এবং এসব সভায় বেগম খালেদা জিয়ার এক সময়ের তথ্য উপদেষ্টা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। সভায় শওকত মাহমুদ প্রস্তাব করেন যে, প্রস্তাবিত ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তাদের ফোরাম হতে সাধারণ সম্পাদক এবং অন্য ফোরাম হতে সভাপতি মনোনীত হবেন।
কমিটির সভায় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে, সমঝোতার এই কমিটি নিয়ে তাঁর নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তিনি আলোচনা করেছেন এবং এতে বেগম জিয়া সম্মতি দিয়েছেন। পরবর্তীতে শওকত মাহমুদ নিজে প্রস্তাবিত ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাদের ফোরামে এ নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয় এবং রুহুল আমীন গাজী সাধারণ সম্পাদক পদে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে সমঝোতা প্রচেষ্টা ভেঙে দেয়। ক্লাব পরিচালনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।
প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নির্বাচন পরিচালনায় তাদের অপরাগতা প্রকাশ করে একযোগে পদত্যাগ করে। অন্যদিকে ক্লাবের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি বারবার নির্বাচন তফসিল ঘোষণা এবং তা বাতিল করার ফলে ক্লাবে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষিতে সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি অতিরিক্ত সাধারণ সভায় ২৮ মে ২০১৫ জাতীয় প্রেস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করে। কিন্তু সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় গরহাজির থাকলে ক্লাবের সাধারণ সদস্যরা ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা সম্পন্ন করে এবং ওই সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচিত হয়। নব-নির্বাচিত এই ব্যবস্থাপনা কমিটি ২৮ মে ২০১৫ থেকে আইনানুগভাবে পূর্ণ দায়িত্বের সাথে ক্লাব পরিচালনা করছে। উভয় ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে সকলের মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। এ স্বাধীনতায় যদি কেউ বাধা সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাব অতীতের মতো এখনো সোচ্চার রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। রাজনৈতিক বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিকে জড়িয়ে কোন বক্তব্য দেয়া কোনো পক্ষেরই উচিত হবে না বলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ মনে করে।