ষ্টাফ রিপোর্টার- দেশের জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের ৩ জন আইনজীবীকে আটক করেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব। তাদের বিরুদ্ধে শহীদ হামজা ব্রিগেড নামে একটি জঙ্গি সংগঠনকে এক কোটি আট লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে একজনের নাম ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। তিনি বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। তার বাবা বিএনপি সরকারের সময়কার একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। অপর দুজন আইনজীবী হাসানুজ্জামান লিটন এবং মাহফুজ চৌধুরি বাপন তার সহকর্মী বলে জানা গেছে।
গতকাল রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আটকের পর এই তিনজনকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় । র্যাবের একজন কর্মকর্তা এসপি সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন আদালতের অনুমতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় তাদের ব্যাংক হিসাব তদারকি করা হয়। পরে দেখা যায় শাকিলা ফারজানা ৫২ লাখ, হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লাখ এবং মাহফুজ চৌধুরি বাপন ২৫ লাক টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে নগদ জমা দেন। তারা এই অর্থ কোথা থেকে পেয়েছেন তা জানাতে পারেনি র্যাব। জঙ্গি সংগঠনটির মনিরুজ্জামান মজুমদার নামে একজন সদস্যের ব্যাংক হিসাবে ঢাকায় এই টাকা জমা দেয়া হয় । পরে তা চট্টগ্রাম থেকে উত্তোলন করা হয় বলে র্যাব জানায়। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আটক তিনজন আইনজীবীকে।
র্যাব বলছে এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের ২৯ জন সদস্যকে আটক করেছে তারা । আটক সেইসব ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য অনুসারে জঙ্গিদের অর্থ সহায়তা দেয়ার সন্দেহে বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব তদারকি শুরু করে র্যাব সদস্যরা। এভাবেই এই তিন আইনজীবী যে এক কোটি আট লাখ টাকা সহায়তা দেন, এমন র্যাবের তথ্য-প্রমাণ হাতে আসে র্যাবের।
রাজনৈতিক হয়রানির অভিযোগ- আটকের এই ঘটনাকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে মনে করছেন শাকিলা ফারজানার পরিবার এবং সহকর্মীরা। শাকিলা ফারজানার বাবা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম টানা সাবেক বিএনপি সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন। মিস ফারজানার বাবা এবং তার নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহুবুবউদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি সে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার। তার বাবা বিএনপির সময় এমপি ছিলেন, হুইপ ছিলেন। সে নিজে সুপ্রিম কোর্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। এসব কারণেই সে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হতে পারে।” বিষয়টিকে খুবই বিব্রতকর বলেও মনে করছেন মিস ফারজানার পরিবার।
তার স্বামী মিস্টার বাহাউদ্দিনের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের পারিবারিক একজন বন্ধু ফোন রিসিভ করে জানান, আইনজীবী হিসেবে স্থানীয় বিএনপির বহু কর্মীর মামলায় আইনি সহায়তা দিয়ে আসছিলেন শাকিলা ফারজানা। গত ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী বোমা হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত অনেকের মামলায়ও সহায়তা দিয়েছেন তিনি। এসব কারণে তিনি রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে থাকতে পারেন বলে তাদের আশংকা। তবে র্যাবের দাবি তারা সব ধরনের তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়েই মিস ফারজানা সহ তিন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেছেন। র্যাব কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদ বলেন, কে কোন দল করে সেটা দেখার বিষয় নয়। এটা ঠিক মিস ফারজানা বিএনপি সমর্থক একজন আইনজীবী । তবে চাইলেই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীকে গ্রেপ্তার যায় না। “যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নিয়েই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি।”
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ এর কার্যক্রম শুরু হয়। নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল তারা। সদস্য হিসেবে তাদের টার্গেট বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সক্রিয় কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়ায় অভিযান শুরু করে র্যাব। তখনই সর্বপ্রথম সংগঠনটির নাম আলোচনায় আসে।