তিনি বলেন, বৈশ্বিক সমস্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তবে দেশের পুলিশ বাহিনী এসব প্রতিরোধে ও নির্মূলে বীরত্বের সঙ্গে কাজ করছে। তাদের এ অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু দেশেই নয়, বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও দায়িত্ব পালন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২১ জন পুলিশ সদস্য জঙ্গিগোষ্ঠী ও বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে জীবন দিয়েছেন। এই বীর পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সহায়তা করায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর ১২৩ শতাংশ বেতন বেড়েছে। পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ ও জনসেবার মানসিকতা থাকতে হবে। পুলিশের সেবা আরো জনবান্ধব করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণে যে কথা বলেছিলেন, এই দেশ স্বাধীন দেশ, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের পুলিশ বাহিনী স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনী। কাজেই তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ থাকতে হবে জনসেবা করার মানসিকতা নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ নিরাপদ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আমরা কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরো জোরদার করব। প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে অসহায় বিপন্ন মানুষের ক্ষেত্রে অকুণ্ঠচিত্তে সেবার হাত প্রসারিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর অর্জিত অভিজ্ঞতা দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু দেশি-বিদেশি চক্র নানাভাবে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায়। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কোমলমতি যুব-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে তারা ঠেলে দিচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাদের (যুব-কিশোরদের) হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষকে হত্যার মতো বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করছে অথবা আত্মঘাতী হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব, গ্লোবাল ভিলেজ। আমাদের পুলিশের কর্মক্ষেত্র, কর্মব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি বন্ধ নয়। পুলিশের কাজের ক্ষেত্র আজ বিস্তৃত হয়েছে সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদক পাচার, পণ্য চোরাচালন, নারী-শিশু পাচার এমনকি জলজ-বনজ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে।’
তিনি বলেন, স্থিতীশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও সমুন্নত রাখতে শিল্প পুলিশ গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিপুল সংখ্যক পদক অতীতে কখনো বিতরণ করা হয়নি। আপনারা পেয়েছেন কাজের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং জনগণকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পেরেছেন বলেই পদকে ভূষিত হয়েছেন। এই পদক আপনাদের কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরো পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আইজিপির পদকে সিনিয়র সচিব হিসেবে করে দেয়া হয়েছে। আমাদের আইজিপি এখন সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কনস্টেবলদের জন্য ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা হয়েছে। আবাসন সমস্যা আমরা সমাধান করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য কাজ করছি। দারিদ্র্যের হার আমরা অন্তত আরও ৭-৮ ভাগ কমাবো। যাতে বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশ বলে কেউ আর অবহেলা করতে না পারে। দক্ষিণ-এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের আগে বীরত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজের জন্য পুলিশ সদস্যদের মাঝে পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পুলিশ বাহিনীর কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন তিনি।