আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে যখন প্যারিসের হেডকোয়ার্টার্স-এ বসে ইউনেস্কো একুশে মার্চকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসাবে ঠিক করে, তখন কি তারা জানত না, কবিতা লিখে যুদ্ধ থামানো যায় না? কবিতা লিখে মানুষের মুখে রুটি তুলে দেওয়া যায় না?
মানুষের মুখ অনেক বড় কথা, কোনও কবি কি পারেন কবিতা লিখে নিজের জন্য দু’টো রুটি জোগাড় করতে? কবিতা লিখে কি কবি পারেন তাঁর বান্ধবীকে ফিরিয়ে আনতে?
কবিতা যখন কিছুই পারে না, তখন এত মানুষ কবিতা লেখেন কেন? এত মানুষ কবিতা বলেন কেন? এত মানুষ কবিতা শোনেন কেন?
যদিও কবিতা লিখে কবিরা খেতে পান না, মাথার উপর ছাদ পান না, তথাপি এখনও গাছতলায় ভিক্ষা করেন দার্শনিক বাউল কবিরা এবং যাঁদের এক একটা দর্শন মনোজাগতিক আলোড়ন তুলে পাল্টে দিতে পারে সমাজ ও সংস্কৃতির পাটাতন।
এইসব কাব্যতাত্ত্বিক বিবেচনাকে সামনে রেখে বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে শরৎচন্দ্র বাসভবনে ছায়ানট (কলকাতা) – এর বিশেষ বৈঠকী আড্ডা ‘কবিতাকে ভালোবেসে’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় আবৃত্তি জগতের তিন বিশিষ্টজন যথা আবৃত্তিগুরু পার্থ মুখোপাধ্যায়, ড. পিনাকী চট্টোপাধ্যায় এবং নিবেদিতা নাগ তহবিলদার-কে। এর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।
অনুষ্ঠানে একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন তিস্তা দে, ঐশানী মজুমদার, আর্যদ্যুতি ঘোষ, অর্ঘ্যদ্যুতি ঘোষ, দেবযানী বিশ্বাস, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, সুকন্যা রায়, তৃষিতা সাহা, সীমান্ত বসু, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাকা দাস, চিত্রা সোম বাসু, ড. মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমী ঘোষ, তনুকা চক্রবর্তী, ইন্দ্রানী চক্রবর্তী, জি.এম. আবুবকর, গোপা গুপ্ত, শুভ্রা ভট্টাচার্য্য, ড: ব্রহ্মানন্দ ভট্টাচার্য্য, ললিতা মন্ডল, কেয়া বোস, তাপসী দে, পাপড়ি চৌধুরী, জয়া ব্যানার্জ্জী প্রমুখ।
দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন: কবিতাকে ভালোবেসে, শ্রুতিবিতান, অনির্বাণ, কবিতা ঘর, ধ্বনি তরঙ্গ, শিল্পীশ্রুতি, কবিতায়ণ, পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন (রূপনারায়ণপুর) – এর শিল্পবৃন্দ।
সঞ্চালনায় ছিলেন সোমা মুখোপাধ্যায় এবং রাকা দাস। প্রায় ৭০ জন বাচিকশিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এই আয়োজন সম্পর্কে সোমঋতা মল্লিক বলেন, “প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটি আমরা উদযাপন করি। এই বছর প্রথম বাচিক শিল্পে অনন্য অবদানের জন্য আমরা বিশেষ সম্মাননা প্রদান করি তিনজন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পীকে। সারা বছর কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা নিয়ে আমাদের নানা আয়োজন হয়, এছাড়াও নজরুলের সৃষ্টির প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে আমরা ৭টি কবিতার অ্যালবাম করেছি। আগামী ৪ এবং ৫ এপ্রিল রবীন্দ্র সদন চত্বরে অবনীন্দ্র সভাগৃহে আমরা নজরুল কবিতা উৎসবের আয়োজন করছি। এভাবে নজরুলের কবিতাকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমরা সারা বছর কাজ করছি।”