চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দোকান বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার পর জামিন পেয়েছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ ১৬ আসামি। রোববার (০৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মো.রহুল আমিন এ জামিন আদেশ দিয়েছেন।
একই আদালতে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিচারাধীন আরও একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্ত সাক্ষী হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আদালত ২২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন। মহিউদ্দিনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রণি কুমার দে বলেন, দোকান বরাদ্দে দুর্নীতির মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে বিচার নিষ্পত্তির জন্য বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী বিচারিক আদালতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ ১৬ আসামি আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত ৩০ হাজার টাকার বন্ডে প্রত্যেক আসামিকে জামিন দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ২২ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত।
রণি কুমার দে জানান, অসুস্থতার কারণে মহিউদ্দিন ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন। আদালত ২০৫ ধারায় রণি কুমার দেকে আইনজীবী প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে মহিউদ্দিনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মুরাদপুর জংশনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্মিত ২৩টি দোকান ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে টেন্ডার ছাড়া বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর নগরীর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। দুদকের তৎকালীন পরিদর্শক শামসুল আলম বাদি হয়ে কোতয়ালী থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ ২৪ জনকে আসামী করা হয়। পরবর্তীতে অভিযোগপত্রে আটজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
মামলা দায়েরের পর ২০০২ সালের ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে একটি রুল জারি করে সেই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মহিউদ্দিনকে জামিন দেয়া হয়। এরপর ২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দুদকের তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে উপ পরিচালক) জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মহিউদ্দিনের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেন। ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর রিট পিটিশন সংক্রান্ত রুল খারিজ করে দিয়ে মামলার কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন হাইকোর্ট। এরপর মামলাটি আবারও সচল হয়েছে।
এদিকে বিগত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা (বিশেষ মামলা নম্বর-৩২/২০০৮) দায়ের হয়। মামলায় মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ২৮ লক্ষ ২৯ হাজার ২৬৪ টাকা ১৫ পয়সা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন এবং এক লক্ষ ২৩ হাজার ৪৯১ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে দুদকের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন খান মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দেন। ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ৯জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর হাইকোর্ট মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট স্থগিত আদেশ তুলে নিয়ে মামলার কার্যক্রম চালানোর জন্য নিম্ন আদালতকে দেয়া নির্দেশ চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আদালতে পৌঁছে। এরপর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।