এক মাসের দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা উদযাপন করছেন তাদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদ সবার ঘরে নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। ধনী-নির্ধন, কৃষক, শ্রমিক, রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষ উৎসবের এ দিনটিতে ঈদের খুশিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করেন। বুকে বুক মিলিয়ে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রকাশ করেন। দেশ-জাতি ও বিশ্বমানবতার কল্যাণে সৃষ্টিকর্তার কাছে দুহাত তুলে প্রার্থনা করেন।
ঈদের খুশির দিনে বেশিরভাগ মানুষই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তবে পেশাগত কারণে অনেককে কর্মস্থলেও থাকতে হয়। আবার পরিবারকে খুব বেশি সময় দিতে না পারলেও নেতা-কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন রাজনীতিবিদরা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
তারা বলছেন, আর দশটা দিনের মতোই গণসংযোগে কাটে রাজনীতিকদের ঈদ। রাজনীতিবিদরা বছরজুড়েই মানুষ নিয়ে থাকেন। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শোনেন। ঈদ উপলক্ষে সেটি আরও বেশি করার সুযোগ হয়।
এলাকার নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ আসেন। তাদের কথা শুনি। সবাইকে মিষ্টি ও সেমাই আপ্যায়ন করি। লোকেরা আসে খায়, দেখা করে, সালাম দিয়ে চলে যায়। পাঁচ-সাতশো লোক হয়। এভাবেই কেটে যায় ঈদের দিন
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ঈদ ভালোই কাটছে। সকালে কামরাঙ্গীর চর ঈদগাহে নামাজ পড়লাম। পরে বোনের বাসায় গেলাম। এরপর গণভবনে গেলাম। সেখান থেকে আবার বাসায় ফিরলাম। বিকেলে প্রধান বিচারপতির বাসায় যাবো। সন্ধ্যা থেকে পুরান বাসায় বসবো। গণসাক্ষাৎকার দেবো- সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এটা হরহামেশাই দিই, প্রায় প্রত্যেক ঈদে।
‘এলাকার নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ আসেন। তাদের কথা শুনি। সবাইকে মিষ্টি ও সেমাই আপ্যায়ন করি। লোকেরা আসে খায়, দেখা করে, সালাম দিয়ে চলে যায়। পাঁচ-সাতশো লোক হয়। এভাবেই কেটে যায় ঈদের দিন’- যোগ করেন তিনি।
রাজনীতিবিদদের ঈদ হলো সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঈদের খুশি নিয়ে মানুষের সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়া। রাজনীতিবিদ হিসেবে এটি আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। ঈদে আমরা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে, হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ ও বুকে বুক মিলাই
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, রাজনীতিবিদদের ঈদ হলো সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঈদের খুশি নিয়ে মানুষের সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়া। রাজনীতিবিদ হিসেবে এটি আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে, হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ ও বুকে বুক মিলাই ঈদে। ঈদে আমরা নিজের, সাধারণ মানুষের ও সর্বোপরি দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করি। এবার বিশেষত ফিলিস্তিনের মানুষসহ বিপদগ্রস্ত বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া করেছি।
তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণেই তো রাজনীতিবিদরা কাজ করেন। ঈদের আগে পুরো রমজানজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেছি। যাকাত ও সদকা দিয়েছি। ঈদের দিন লাখো মানুষের সঙ্গে মিলিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে পরম শান্তি অনুভব হয়। দিনভর মানুষের সঙ্গে সেমাই খাওয়া, মানুষকে খাওয়ানো, মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তাদের সুখ-দুঃখ শেয়ার করা হয়। মানুষের জন্য দোয়া করা হয়। নিজের জন্য মানুষের কাছে দোয়া চাওয়া হয়। ঈদের দিন কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের ঈদ আসলে আর দশটা দিনের মতোই গণসংযোগে কাটে। ঈদের দিনটা বাসায় নেতাকর্মী- শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও আপ্যায়নের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ খুব কম হয়। ঈদের পরের কয়েকটা দিন বাইরে নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কেটে যায়। সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করাই ঈদ।
রাজনৈতিক নেতাদের ঈদ আসলে আর দশটা দিনের মতোই গণসংযোগে কাটে। ঈদের দিনটা বাসায় নেতাকর্মী- শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও আপ্যায়নের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ খুব কম হয়। ঈদের পরের কয়েকটা দিন বাইরে নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কেটে যায়
ঈদ উপলক্ষে সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তিনি বলেন, এ বছর আমরা এমন একটা সময়ে ঈদ উদযাপন করছি যখন ফিলিস্তিনে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে, বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছে। শত শত এতিম শিশু এক টুকরো রুটির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। যুদ্ধবিগ্রহ ও আধিপত্যের কারণে বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করা। ঈদ আমাদের সে শিক্ষাই দেয়।
একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এদিন সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।