স্টাফ রিপোর্টার: দেশে সড়ক ও নদীপথে দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগ ঘটে বিভিন্ন সড়ক বা মহাসড়কের বাঁকে। মোড় ঘুরতে গিয়ে অন্য পাশে গাড়ি দেখতে না পাওয়ার কারণেই এসব দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এমনকি দেশে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতের সংখ্যাও কম নয়।
স্থল ও পানিপথে এই দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে শিক্ষকদের সহায়তায় রাজশাহীর খুদে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যার ব্যবহারে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি খুদে বিজ্ঞানীদের।
রাজশাহীর শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির খুদে বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। শিক্ষার্থীদের এ কাজে স্কুলে সকলের সঙ্গে উৎসাহ দিয়েছেন শিক্ষক তাসকিনা নাজনিন। তারা উদ্ভাবিত এই প্রকল্পের প্রদর্শনীর স্টল দিয়েছেন রাজশাহীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার ক্যাম্পাস আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) আয়োজনে বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তি বিষয়ক এ মেলা রবিবার উদ্বোধন করেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হাবিবুর রহমান।
দুর্ঘটনা কমাতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন খুদে বিজ্ঞানী বলেন, আমরা ক-গ্রুপের স্টলে দুটি প্রকল্পের প্রদর্শনী করছি। একটি প্রকল্পে মহাসড়ক বিশেষ করে পাহাড়ি রাস্তার মোড়ে ‘ওয়েট সেন্সর’ ব্যবহার করা হয়েছে। সঙ্গে রাস্তার মোড়েই দুটি প্রদর্শনী পর্দা ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে বাস্তার বাঁক থেকে কত দূরে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িটি আছে ওই পর্দায় তা দেখতে পাবেন গাড়ির চালকরা। যাতে করে তিনি সতর্ক হতে পারবেন। ফলে মোড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। ওয়েট সেন্সর রাস্তার নিচে বসানো থাকবে বলে জানান এই খুদে বিজ্ঞানীরা।
খুদে বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, তাদের স্টলে আরও একটি প্রকল্প আছে। সেন্সর ব্যবহার করে এই প্রকল্প কাজে লাগানো যাবে রেল লাইনে। রেল ক্রসিংয়ের দুই পাশের কিছু দূরে সেন্সর বসিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য যান বা মানুষ চলাচল বন্ধ বা চালু করা যাবে। ক্রসিংয়ের পাশে রেল লাইনে লাগানো সেন্সরের ভেতরে ট্রেন প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় হাতল পড়ে যাবে। এতে লাইনের ওপর দিয়ে অন্য যান বা মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। আবার ট্রেন ক্রসিং পার হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই হাতল উঠে যাবে এবং অন্য যান বা মানুষ চলাচল শুরু হবে।
এই স্কুলের খুদে বিজ্ঞানীরা শুধু স্থলপথের দুর্ঘটনা রোধের ব্যবস্থা করেনি। তারা পানিপথে কিভাবে জাহাজ বা লঞ্চের দুর্ঘটনা বন্ধ করা যায় সেই প্রযুক্তিও এনেছেন রাজশাহীর বিজ্ঞান মেলায়।
এই প্রযুক্তি সম্পর্কে শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের দশম শ্রেণির খুদে বিজ্ঞানী আম্মার আবদুল্লাহ বলেন, দেশে লঞ্চ ও জাহাজে প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। চালকদের অসাবধানতার কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু লঞ্চ ও জাহাজে একটি স্বয়ংক্রিয় সেন্সর ব্যবহার করলে সেই দুর্ঘটনা কমে আসবে। কারণ, এই সেন্সর জাহাজে ব্যবহার করার ফলে সামনের জাহাজ কত দূরে আছে তা চালককে এলার্ম দিয়ে জানিয়ে দেবে।
বিজ্ঞান মেলায় উপস্থিত থাকা শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের শিক্ষক নায়লা মনি বলেন, এবারের মেলায় তাদের স্কুল থেকে দুটি স্টল দেওয়া হয়েছে। স্টলের ক-গ্রুপে দুটি ও খ-গ্রুপে রয়েছে একটি প্রকল্প। শিক্ষকদের সহায়তায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির খুদে বিজ্ঞানীরা এই প্রকল্প তৈরি করেছে। উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে সড়ক ও পানিপথের দুর্ঘটনা অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব হবে। তাদের এই প্রযুক্তি দেশে এখনো কেউ ব্যবহার করেনি বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, তিন দিনব্যাপী এই বিজ্ঞান মেলা শেষ হবে মঙ্গলবার। মেলায় রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০টি স্টল বসেছে। প্রতিটি স্টলেই খুদে বিজ্ঞানীরা নিজেদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে।