ইসলামিক ডেস্ক- “মুসলমান মহিলারা কেন তাদের মাথা আবৃত করে রাখেন?” মুসলমান অমুসলমান নির্বিশেষে অনেকেই এ প্রশ্নটি করে থাকেন। অনেক মুসলমান মহিলার জন্য সত্যিকার অর্থেই এটা একটা পরীক্ষা। এ প্রশ্নটির উত্তর অত্যন্ত সহজ- মুসলমান মহিলারা হিজাব (মাথা ও শরীর আবৃত রাখা) পালন করেন, কারণ আল্লাহ তাদের এটা করতে বলেছেন। প্রকৃত পক্ষে এটা কতটা সঠিক।
কোরান তার বিশ্বাসীগণের পোশাকের ব্যাপারে সম্পূর্ণ পরিস্কার। এক নতুন উদ্ভাবিত বস্তুু হিসেবে হিজাব এসেছে ইসলামে। এটি একটি গতানুগতিক পুরানো আমলের পোশাক যা ধর্মীয় নয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে কোরান কিছু বলে না। আল্লাহর তার কোরআনের মাধ্যমে যা বিধান করেছেন তা সত্য অনুসারীগণের জন্য। তার আইনের যেকোন একটি অমান্য করার অর্থ শেষ হয়ে যাওয়া। মুসলিম মহিলাদের জন্য পোশাকের ব্যবহার এ ব্যাপারে বোঝার জন্য এ বিষয়ে আল্লাহ কি বিধান দিয়েছেন তা বোঝা ও দেখা প্রয়োজন তাহলেই হিজাবের বিষয়টি সহজ হবে। হিজাব কথাটি কোরআনেঃ হিজাব কথাটি অনেক মুসলিম মহিলা দ্বারা কথিত যা তাদর মুখ মন্ডল ঢেকে রাখা অথবা চোখ বাদে মুখ মন্ডল। কিছু কিছু সময় এক চোখও ঢেকে রাখে। আরবী শব্দ হিজাবের অর্থ পর্দা বা অবগুন্ঠন। হিজাবের আরো অন্যান্য অর্থ পর্দা ,আবরণ, ভাগ,বিভক্ত ইত্যাদি। হিজাব কথাটি কোরানে ব্যবহৃত হযেছে ৭ বার এর মধ্যে ৫ বার হিজাব হিসাবে এবং হিজাবান হিসাবে ২ বার।
৭ঃ৪৪,৩৩ঃ৫৩,৩৮ঃ৩২,৪১ঃ৫,৪২ঃ৫১,১৭ঃ৫১,১৭ঃ৪৫,১৯ঃ১৭ এসব আয়াতে হিজাব শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সুপারিশ হিসাবে কিন্তু কিছু মুসলিম মহিলারা এটাকে আর্দশ পোষাক মনে করে।হযরত মোহাম্মদের (দঃ)ওফাতের পর হিজাব কথাটি পোষাকের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হযেছে কিন্তু নবীজী এটাকে নিদিষ্ট পোষাক করে যাননি। আল্লাহ হিজাব কথাটি ব্যবহার করেছেন তেমন যেমন হাদীস কথাটি ব্যবহার করেছেন। হিজাব মুসলমান মহিলাদের আর্দশ পোষাক এ সম্পর্কে কোরাআন কিছুই বলেনি। আবার অনেক খিমার শব্দটিকে হিজাবের সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করেন কিন্তু খিমার একটি আরবী শব্দ যার অর্থর্ ঢাকনা, পর্দা পোষাক। তাই কোন কিছু ঢাকার কাপড় ও খিমার হয়। আরবে খামরা শব্দটি খিমার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। । কিমার ওখামার দুটি শব্দর অর্থই পর্দা। একটি জানালা,শরীর , টেবিল ঢাকার পর্দা অপরটি খিমরা যা মনের পর্দা কিন্তু বেশীর ভাগ অনুবাদক হাদীস দ্বারা উদ্বুদ্ব হয়ে এটাকে মাথা ঢাকার বা শরীর আবৃত রাখার পর্দা হিসাবে অনুবাদ করেছেন।
কোরআনের ২৪ঃ৩১ আয়াতে এছাড়া পোষাক সম্পর্কে প্রথম যে বিধান সেখানে (৭ঃ২৬) এ শব্দটি রযেছে। কিন্তু কিছু মুসলিম মনে করে সূরা ২৪ এর ৩১ আয়াতে হিজাব (মাথার ঘোমটা) এর বদলে খিমোরিহিন্না শব্দটি ব্যবহার করেছেন কিন্তু তারা ভুলে যায যে আল্লাহ হিজাব কথাটি কয়েকবার ব্যবহার করেছেন। এতে বুঝা যায় খিমার কথাটি অ্ন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে হিজাব বা ঘোমটা হিসাবে নয়। মহিলাদের পোষাক সম্পর্কে কোরাআনে মূলত তিনটি বিধান রয়েছে। যা দিয়ে কোনভাবেই শুধু মাত্র হিজাব কে নিদিষ্ট করা হয় নাই বরং সকর মুমিনদের নিজেদের উপস্থাপনের বিষয়ে বরা হযেছে ।
মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে তিনটি বিধানঃ প্রথম বিধানঃ সর্বোত্তম পোশাক ঃ “শোন হে, আদম সন্তান ! আমি তোমাদের জন্য লিবাছ পাঠিযেছি । যেন তোমাদের গোপন অঙ্গ আবৃত থাকে , আর সজ্জা হিসাবেও। আর পরহেযগারীর লিবাছইতো উত্তম।” এ ওতো আল্লাহর আয়াত সমূহের শামিল। যেন তারা উপদেশ লাভ করে। এটাই কোরআনে পোষাক সর্ম্পকে যেহেতু সকল মানুষের জন্য মূল বিধান সেহেতু এটাই প্রথম বিধান ইসলামে মহিলাদের পোষাক সম্পর্কে।
দ্বিতীয় বিধান – গোপন াঙ্গ ঢেকে রাখাঃ দ্বিতীয় বিধান দেখা যায় ২৪/৩১ আয়াতে। এ আয়াতে বলা হয়েছে “আর মুমিনদের কে ও আপনি বলে দিন : যেন তাদের চোখ নীচের দিকেই ঝুকিঁয়ে রাখে আর নিজেদের গোপন অংঙ্গের হিফাজত করতে থাকে। আর নিজেদের সাজ সজ্জা যেন প্রকাশ না করে তবে কিনা যতটুকু প্রকাশ্য অবস্থায় থাকে তা বাদে। আর নিজেদের গলায় ওড়না ব্যবহার করবে,আর তারা নিজেদের সাজ সজ্জা মোটেই প্রকাশ করবে না। তবে কি নিজ স্বামী,বাবা, অথবা নিজ স্বামীরবাবা,নিজের সন্তান,নিজ স্বামীর সন্তান,নিজের ভাই,ভাতিজা বা ভগ্নি অথবা ঘনিষ্ঠ মেয়েদের সমনে কিংবা বাদী চাকরানী অথবা কর্মচারী যারা পুরুষদের বিশেষ কর্ম সম্পর্কে মোটেই আগ্রহী নয়। কিংবা ছোট ছেলে যারা এখনও মেয়েদের দৈহিক রহস্য সর্ম্পকে কিছুই জানে না। এদের ব্যতীত আর তারা পা ফেলবে এমনভাবে যাতে তাদের গোপন অলংকারাদির কথা অনুমান করা যাবে। সবাই আল্লাতালার দরবারে তওবা কর। সবাই একত্রে,হে মুমিনগণ যেন তোমরা নাজাত লাভে সক্ষম হও।”
২৪/৩১এ আল্লাহ মহিলাদের পর্দা ব্যবহার করতে বলেছেন। এখানে আল্লাাহ মহিলাদের হুকুম দিযেছেন তারা যেন তাদের গোপন অঙ্গ ঢেকে রাখে এবং বুক ও ঢেকে রাখে তাদের পোষাক দিয়ে। আল্লাহ মহিলাদের কখোনই মাথা বা চুল ঢাকতে বলেননি। আরবী শব্দ গাইব (২৪/৩১)আয়াতে ব্যবহৃত হযেছে যার অর্থ বুক। কিন্তু মাথা বা চুলের আরবী শব্দ আয়াতে নাই । তাই আয়াতের বক্তব্য পরিস্কার যে বুক আবৃত রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ধর্মীয় নেতা এবং অনুবাদক এর অর্থ মাথা বা চুল আবৃত বলেছেন। ২৪/৩১ আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে তারা এমনভাবে পা ফেলবে যেন তখন তাদের শরীর পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এখানে শরীর পোষাক আবৃত থাকবে বলা হয়েছে মাথার কথা নেই।
আবার এই আয়াতে জিনাতাহুনা শব্দ বলতে মহিলাদের শরীরে কোন অংশ বা সৌন্দর্যকে বুঝানো হযেছে। কিন্তু অনুবাদক এটাকে কৃত্রিম অলংকারাদি বুঝিয়েছেন। আল্লাহ এখানে বলেছেন তারা যেন তাদের জিনাতুন্নহুনা আবৃত রাখে হাটাঁ চলার সময়। কিন্তু হাটাঁর সময় মাথার চুল আবৃত রাখতে বলা হয়নি। মোট কথা তারা শরীরের কোন অংশ প্রয়োজন ছাড়া অনাবৃত করবে না। অর্থ্যা আল্লাহ স্বাধীনতা দিয়েছেন নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার। আর এই ক্ষমতা প্রত্যেক মহিলাকে দিয়েছেন যারা আল্লাহর বিধান মেনে চলে তারা নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কখোন তাদের কি করা প্রয়োজন। আল্লাহ ছাড়া আর কারো আদেশ মান্য করা উচিত নয। তেমনি হিজাব/ খিমার ক্ষেত্রে যে সকল মহিলারা হিজাব পরে সামাজিক প্রথা বা ব্যক্তিগত পোসাক হিসাবে তাদের পূন্য হবে আর যারা পরছেনা তাদের পাপ হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। তৃতীয় বিধান- তৃতীয় বিধান বলা হয়েছে কোরাআনের ৩৩ এর ৫৯ আয়াতে। এ আয়াতে বিশেষ করে নবীর ও মুমিন স্ত্রী দের বিশেষভাবে বলা হয়েছে –
“ হে নবী! আপনি শুনুন ঃ আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা, আর মুমিন মুসলমানদের স্ত্রীদেরকে বলে দিন যেন নিজেদের আবৃত রেখে চলে তবে তাদেরকে কেউ ভৎর্সনা করতে পারবেনা আল্লাহ তো বড়ই ক্ষমাশীলও দয়াময়।” ৩৩/৫৯ এ বুঝা যায় আল্লাহ মুসলিম মহিলাদের পোষাক এর বিধান করে দিয়েছেন সেই নবীজীর সময় থেকেই। যদিও আয়াতটি নবীজীর উদ্দেশ্যে তবু এটা তার সময় থেকেই প্রযোজ্য নিদের্শ। এর মাধ্যমে ইসলামের বিধান ও আল্লাাহর দেয়া শিক্ষা পাওয়া যায়। এখানে আল্লাহ নবীজীর স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন গনের স্ত্রীদের স্পষ্ট বলেছেন তারা যেন পোষাক পরে এবং তা যেন অনেক ছোট বা বড় না হয়। তারা যেন তাদের গোড়ালী পযর্ন্ত আবৃত করে পরে। তাহলে এটা স্পষ্ট যে মুসলমানদের পোষাকের বিধান কোরআন রয়েছে এবং এটা খুবই সহজ ও নম্র। । কিন্তু সুনিদিষ্টভাবে হিজাব সম্পর্কে বলা হয়নি। তাই বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রচলিত ব্যবস্থার সংগে খাপ খাইয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন পোষাক পরে। আমেরিকার মহিলাদের পোষাক সোদিআরবের মহিলারা পরতে পারেনা আবার মরুভূমিতে বসবাসকারীদের পোষাক লন্ডনের মহিলারা পরতে পারেনা। সুতরাং কোন মুসলমান দেশের পোষাক সকল মুসলিম মহিলাদের বাধ্যতা মূলক পোষাক হতে পারেনা।
হিজাবের ব্যবহার যে ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে হয়নি তা ইতিহাস থেকেই জানা যায়। যখন মুসলমানরা হিজাবকে ইসলামীক পোষাক হিসাবে মানে তখন তারা কোরআনকে অমান্য করে কারণ কোরআনে এসর্ম্পকে কিছুই বলা হযনি। হিজাব বা পর্দার ব্যবহার হতো সভ্যতার শুরুর দিকে। রোমান বা গ্রীক সভ্যতার সূচনালগ্নে এটা ব্যবহার হতো। এর প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতœতাত্ত্বিক আবিষ্কার, কবিতা, চিত্রকর্ম সামাজিক অনুষ্ঠানে। গ্রীক ও রোমান সাংস্কৃতিকে, মহিলা ও পুরুষরা উভয়ই ধর্মীয় ভাবে মাথা আবৃত রাখে। তাই এই প্রথা মহিলা ও পুরুষদের মাথা আবৃত রাখা ইহুদীদের কাছ থেকে ধার করা। যা লিখেছেন টালমুদ। তখন খৃষ্টানরাও তা মেনে নেয়। এক নামকরা রাব্বী ব্যাখ্যা করেন একদল ইহুদী যুবতীকে, যে আমরা মাথা আবৃত রাখা সর্ম্পকে কোন রকম আদেশ পাইনি কিন্তু আমরা জানি এটা হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। নবীজীর মৃত্যুর পর যখন হাদীস লেখা হলো তখন বলা হলো মহিলাদের মাথা আবৃত রাখার জন্য। কিন্তু নবীজী থাকাকালীন বলা হয়নি এমন কি কোরানেও বলা হয়নি।
যে কোন ইহুদী ধর্মীয় পুস্তক থেকে জানা যায় তাদের ধর্মীয় নেতারা মাথা আবৃত রাখতে বলেছেন। এখনও ইহুদী মহিলারা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাথা আবৃত রাখে। এবং খৃষ্টানরাও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাথা আবৃত রাখে। সুতরাং হিজাবকে ব্যবহার করা যায় আরবী প্রথা, ইহুদী খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় লোকেরা ব্যবহার করে এই হিসাব্ েকিন্তু কোরআনে বা ইসলামে আছে এই হিসাবে নয়। সৌদি আরবে এখন ও সবাই মাথা আবৃত রাখে। কারন এটা তাদের পোষাক। কোন ইসলামিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে নয়। উত্তর আমেরিকায় অনেক উপজাতি মুসলিম পুরুষরা হিজাব ব্যবহার করে মহিলাদের পরিবর্তে। যদি হিজাব আর্দশ পোষাক হয় তবে বলতে হবে এর প্রথম কৃতিত্ব মাদার তেরেসার। হিজাব একটি প্রথাগত পোষাক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের। যার সঙ্গে মুসলমান বা ইসলামের নিদিষ্ট কোন সর্ম্পক নেই। পৃথিবীর কোথাও হিজাব পরে মেয়েরা কোথাও ছেলেরা। সুতরাং কোরআনে তিনটি মূল বিধান-১. পরহেযগারীর লেবাসই উত্তম লেবাস ২.যখন পোষাক পরিধান করবে বুক ঢেকে রাখবে।
৩.নিজেকে আবৃত করে রাখবে মেনে একজন মহিলাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে যে কোন ধরনের পোষাক পরার তার পরিস্থিতি ও সমাজ অনুযায়ী। এই মূল বিধানের সঙ্গে কোন নতুন কিছু সংযুক্ত করার অর্থই হলো আল্লাহর আইনের সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া। কিন্তু তা মানুষ করতে পারেনা। তাই মহিলাদের পোষাক সর্ম্পকে কোন নতুন নীতি বা আইন দেয়া কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়।