গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর হামলাকারীদের কয়েকজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন এমন তথ্যের প্রেক্ষিতে আজ একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে।
কিভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উগ্র মতবাদ প্রবেশ করছে সেটি খুঁজে বের করা এবং সেটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে সরকারের স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করবেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিভাবে উগ্র-মতবাদ প্রবেশ করছে?
দু’জন ছাত্র বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শফিক। এখানে তার ছদ্মনাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
বছর দেড়েক আগের একটি ঘটনা তিনি আমার সাথে শেয়ার করছিলেন।
বিকেলের দিকে ইউনিভার্সিটির লবিতে বসে ছিলেন তিনি। ক্যাম্পাস ততক্ষণে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে।
শফিক বলছিলেন এসময় তিনি দেখতে পান একটি মাইক্রোবাস তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের মূল গেটে থামে এবং সেখান থেকে কয়েকজন বের হয়ে সরাসরি তার কাছেই আসে।
“ক্লাস শেষে চা খাবার জন্য গেলাম। খুব সুন্দর চেহারার তিন-চারজন ছেলে আমার কাছে আসলো। নাম পরিচয় জানতে চেয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দেয় কিছু লিফলেট”-বলেন শফিক।
শফিক বলছিলেন লিফলেটটি ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের।
ছেলেগুলো শফিকের সাথে দীর্ঘসময় নিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখায়।
কিন্তু শফিক জানতো হিজবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ সংগঠন এবং এদের সদস্যদের সাথে তিনি কথা বাড়াতে চাননি।
ক্লাসের দোহাই দিয়ে তাদের ততক্ষনাৎ এড়িয়ে যান তিনি। কিন্তু বিষয়টি তার মনে খটকা লাগে।
ঘন্টা দুয়েক পরে আবারো ফিরে আসেন একই জায়গায়।
দেখতে পান ছেলেগুলো চলে গেছে কিন্তু বেশ কিছু লিফলেট রেখে গেছে একটি টেবিলের ওপর।
সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার সাথে জড়িত অন্তত তিনজন ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্র কিভাবে উগ্র মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বা কি প্রক্রিয়ায় তারা জড়িয়ে পড়ছে সেই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আশা ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখা গেল প্রবেশপথে নিরাপত্তা কর্মীরা সবার ব্যাগ ও দেহ তল্লাসি করছেন। যেটা এর আগে কখনও হয়নি।
শিক্ষার্থীদের পুরো-নাম ঠিকানা লিখতে হচ্ছে তাদের খাতায়।
আর শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবার গলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড ঝুলছে।
আমি আরো দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেছি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য।
কিন্তু গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংশ্লিষ্ট থাকার খবরের পর, যেকোনও মন্তব্য করতে যেয়ে তারা হয়ে পড়েছে অনেক সর্তক।
এমনকি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতেও তারা নারাজ।
অর্থাৎ কিভাবে তাদের কাছে জঙ্গি মতবাদ পৌঁছাচ্ছে সেটার উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ কোনও কাজ নয়।
তারপরেও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে রাজি হন।
তিনি বলছিলেন “আমি দূর থেকে দেখছিলাম একটি লোক লিফলেট বিতরণ করছিলো। আর তার ঠিক পাশেই একজন লোক দামী একটি মোবাইলে ছবি তুলছিলো। যাদের লিফলেট দেয়া হচ্ছিল তাদের ছবি তুলছিলো। আর যারা টেবিলের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে লিফলেটগুলো পড়ছিলো তাদের ছবিও তুলছিলো”।
“যিনি লিফলেট দিচ্ছিলেন তিনি আমাকেও বলছিলেন যে আসেন একটু কথা বলি। লিফলেটগুলোও দেয়ার চেষ্টা করছিলো। আমি বললাম যে আমার কাজ আছে আপনাকে সময় দিতে পারছি না”-বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরেকজন ছাত্র।
আর দুই ছাত্রের বক্তব্য থেকে ধারণা পাওয়া যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন না কোন ভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের প্রচারণা চালানো বা ছাত্রদের তাদের মতবাদে আকৃষ্ট করার একটা প্রচেষ্টা নিয়েছিল।
কিন্তু প্রক্রিয়াটা কি সেটা বের করা বেশ কঠিন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন প্রথমে কিছুদিন ইসলামের কথা বলে সাধারণ ছাত্রদের নামাজে অভ্যস্ত করে তারা।
এরপর ধীরে ধীরে তারা মাত্রা এবং সুযোগ বুঝে এ ধরনের উগ্র প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
কিন্তু ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদেরকে মোটিভেট করার মতো এই ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য কী ব্যবস্থা আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের?
আশা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মন বলছিলেন “আমাদের একটা প্রক্টোরাল বডি আছে, ডিসিপ্লিন কমিটিও আছে। প্রক্টোরাল বডি খোঁজখবর রাখে আমাদের ক্যাম্পাসে ও এর আশেপাশে কী ঘটনা ঘটছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনও ঘটনা ঘটে নাই। যদি ঘটে তাহলে অবশ্যই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব”।
মি: বর্মন আরও বলছিলেন মোটিভেশন বা ছাত্রদের উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত করার কাজ হয়েছে আস্তে আস্তে দীর্ঘ সময় নিয়ে।
এখন এই দুইটি হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছাত্রদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে যেমন চিন্তা-ভাবনা চলছে তেমনি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।
বিবিসি