অগ্রসর ডেস্ক রিপোর্ট : সৌদি ও মিশরের নেতৃত্বে কাতারের সঙ্গে অর্ধডজন মুসলিম দেশের সম্পর্ক ছিন্নের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অজুহাতে কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা বলা হয়েছে। এদিকে সৌদি আরব অন্যান্য মুসলিম ‘ভ্রাতৃপ্রত্রিম’ দেশগুলোকে তাদের আহ্বানে সাড়া দিতে বললেও দুটি দেশ ছাড়া কেউ সাড়া দেয়নি।কার্যত : কাতার ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
মালদ্বীপ ও ইয়েমেনের একাংশ কাতারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারে ঐকমত্য দেখায়। এদিকে দোহার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেয় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেছেন, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না ইসলামাবাদ। খবর আল জাজিরা ও রয়টার্সের।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানালেও কাতার বয়কটের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ইজরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, নিঃসন্দেহে এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রতি কাতারের সমর্থনের কারণে দেশটির ওপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ তেল আবিব।
সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অজুহাতে কাতারের সাথে সৌদি আরব ও মিশর নেতৃত্বাধীন অর্ধডজন মুসলিম দেশের সম্পর্কচ্ছেদের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়ী বলে অভিযোগ ইরানের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরের পরপরই এমন সিদ্ধান্ত আসায় মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে এটা স্পষ্ট যে এতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাত না থেকে পারে না। ইরানও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই অভিযোগের তীর ছুড়েছে।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে সৌদি আরবের সাথে দীর্ঘদিনের তিক্ত সম্পর্কের কারণে পরোক্ষভাবে ইরানকে টার্গেট করেই কাতারের সাথে কূটনীতিক ও বাণিজ্যিক ও যোগাযোগসহ সকল সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো এবং বিশেষ করে মিশর কাতারের প্রতি তাদের নিন্দা জানিয়ে আসছিলো কারণ কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন ইসলামিস্টদের সমর্থন দিয়ে আসছিলো। মুসলিম ব্রাদারহুডকে মিশর ও সৌদি আরব ভয়ানক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করে।
সাম্প্রতিক এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভূমণ্ডলে বড় আকারের ফাটলের সৃষ্টি করেছে।
কাতার ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েফ এরদোয়ান। পুতিন-এরদোয়ান আলাপে দুই নেতা কাতারের কূটনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্যা সমাধানে কাতার ও অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতায় প্রস্তুত আঙ্কারা।
তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমাস বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাতারের সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসুগলো বলেছেন, ‘উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্য ঐক্য ও সংহতিকে তুরস্ক তার নিজের ঐক্য হিসেবে বিবেচনা করে।’
উল্লেখ্য, ৫ জুন ২০১৭ সোমবার কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় ছয়টি আরব দেশ। দেশগুলো হচ্ছে: সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।
দেশগুলোর পক্ষ থেকে কাতারের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে কাতার বলছে, ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য পরিষ্কার। তারা আমাদের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং খবরদারি করতে চায়। এটা কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত।’