অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার আসন্ন শীতে কোভিড -১৯ এর সেকেন্ড ওয়েভ কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্য জেলা হাসপাতালগুলোকে আইসিইউ এবং প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাসহ প্রস্তুত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত শীতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল। করোনাভাইরাস আবার শীতকালে আসতে পারে, সেটা মাথায় রেখে প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ থেকে শুরু করে অক্সিজেনের ব্যবস্থাসহ তাৎক্ষণিক সব ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন শেষে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৩ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি।’
করোনাভাইরাস কেবল বাংলাদেশেই নয় সমগ্র বিশে^ই ক্ষতির একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে কষ্টের একটা বিষয় হচ্ছে আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পরছে না। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। তাঁদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারপরেও আমরা চাচ্ছি তাঁদের পড়াশোনাটা যাতে চলমান থাকে সেজন্য সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম চলছে।’ তিনি এ সময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাঁর সরকারের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টায় অভিভাবকদেরও সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়কটিকে মুজিববর্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে একটি উপহার হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন শেষে সুবিধাভোগীদের সাথে মত বিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছি।’
এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এমন মহাসড়ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাঁর (রাষ্ট্রপতির) অনুপ্রেরণা ও উদ্যোগের কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’
এ অঞ্চলে এ জাতীয় মহাসড়ক নির্মিত হতে পারে এটা কল্পনার বাইরে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় এই মহাসড়কটি নির্মাণের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়ে যাবে।’
এ অঞ্চলের মানুষ এখন নাসিরনগর বা ভৈরব হয়ে দ্রুত ঢাকা যাতায়াত করতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মহাসড়ক নির্মাণ করে একটি দুর্দান্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে।
২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
হাওরের বুক চিরে চলে যাওয়া ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অলওয়েদার সড়কে ৫৯০ দশমিক ৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯ দশমিক ৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে ২৬১ দশমিক ৮১ মিটার দীর্ঘ ভাতশালা সেতু, ১৭১ দশমিক ৯৬৪ মিটার ঢাকী সেতু ও ১৫৬ দশমিক ৭২ মিটার দীর্ঘ ছিলনী সেতু মহাসড়কের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্ষায় ভাঙন থেকে সড়ক রক্ষায় ৭ দশমিক ৬০ লাখ বর্গমিটার সিসি ব্লক দিয়ে স্লোপ প্রটেকশনের কাজ করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব মো.নজরুল ইসলাম প্রকল্পের পর একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আব্দুস সোবহান গোলাপ, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মহাসড়কটির ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।
ভিডিওতে হাওরের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়কের ভিডিও চিত্র দেখে হাওর ও সড়কটির সৌন্দর্যে অভিভূতি হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ইশ! কবে যে যাব। এ সড়কে (দেখতে) কবে যে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনটা পড়ে থাকলো। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে কবে যাব? রাষ্ট্রপতিও চান আমি যেন সরাসরি যাই। আমি যাব। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে এ সড়ক দেখতে যাব।’
দেশের কোনো অঞ্চলের মানুষ আর অনুন্নত থাকবে না উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো হবে। হাওর এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা ও গড়ে তুলতে চায় সরকার।’
শেখ হাসিনা বৈশি^ক সংকট করোনা মোকাবেলায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের করোনা থেকে বাঁচাতে তাঁদের খেলাধূলা করা এবং রোদের সংস্পর্শে আসার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মুক্ত বাতাসে থাকতে হবে এবং রোদে থাকাটা জরুরি।’ সরকার প্রধান বলেন, অভিভাবকদের নিজেদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখার পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, যাতে এই করোনাভাইরাসে আর কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হন।’
করোনা জয় করেই তাঁর সরকার এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেমন ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে কাজেই যে কোন ধরনের সমস্যা সেটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগই হোক না কেন আমরা সেগুলো মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব ।
এ সময় ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে দৃপ্তকন্ঠে বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ।’