অগ্রসর রিপোর্ট : দেশে করোনা শনাক্তের ১২৫তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৭ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ২৭৫ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৪ জন কম মারা গেছেন। গতকাল মারা গেছেন ৪১ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে মৃত্যুর হার আজ শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ কম।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৬২ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৮৪৪ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৩ হাজার ৭০৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮৬ হাজার ৪০৬ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ হাজার ৪৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৯৪৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৪১১ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৫ হাজার ৬৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৩৬০ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ১৮ হাজার ২৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৭ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৮৬২ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৫ ৪৮৫টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭৭টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮৮ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৩২ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ১৪৪টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২৯ জন এবং নারী আট জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন পুরুষ ১ হাজার ৭৯৯ জন এবং নারী ৪৭৬ জন; এদের মধ্যে শতাংশ বিবেচনায় পুরুষ ৭৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং নারী ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জন হাসপাতালে এবং ১৪ জন বাড়িতে মারা গেছেন। অঞ্চল বিবেচনায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ২ জন করে এবং বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৫ জন এবং ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের বয়স বিবেচনায়, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৬২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হার ৪৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী ঢাকা বিভাগে ৫০ দশমিক ১১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক শূন্য ৯২ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ লোক মারা গেছেন।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৯৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ১০৬টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৮ জন এবং খালি আছে ৩৪টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৪৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৫ জন এবং খালি আছে ২৪টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪৫টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬১ জন। খালি আছে ১০ হাজার ৫৮৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯৪টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২২৬ জন। খালি আছে ১৬৮টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৬৬টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৪০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৯৯টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৮৯৩ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ৯১৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭৬৮ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১৭ হাজার ৭২৩ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৭ হাজার ১৯২ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৬০০ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ১৮১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ১৬৯ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড়া পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৪৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৫৩৭ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস মজুদ আছে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৩টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক মজুদ আছে ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৭টি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ১১ লাখ ৪৮ হাজার ২৭১টি এবং গগলস ১৩ লাখ ১০ হাজার ২৮০টি মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৯টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৮০টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৬৭ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ৬ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৭৫৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৫ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৯ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৫১২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৩২ হাজার ১৬৭ জন। ২৪ ঘন্টায় ৫৮৪ জন এবং এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৮০৮ জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৯ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৯৬৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ২২৬ জন। ২৪ ঘন্টায় ৫ হাজার ৫৭৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮১ জন মারা গেছেন।