কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হচ্ছে আগামী আগস্ট মাসে। শিগগিরই বৃহৎ এই প্রকল্পের ঠিকাদার নির্বাচনের কাজ চূড়ান্ত হবে। তারপরই দেওয়া হবে কার্যাদেশ।
ইতিমধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্পের কারিগরি মূল্যায়নের বিষয়ে সম্মতি বা নো-অবজেকশন দিয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যাতায়াত সহজ এবং আরামদায়ক করতে সরকার ওই এলাকায় রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন পায়। ওই সময় ব্যয় ধরা হয় ১৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অর্থের সংস্থান না হওয়ায় গত প্রায় সাত বছরেও সরকার জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর তেমন কোনো কাজ করতে পারেনি। ফলে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছিল না। অর্থের সংস্থানের জন্য সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। শেষ পর্যন্ত এডিবি এ প্রকল্পে আগ্রহ দেখায়। এরপর গত বছরের ১৯ এপ্রিল প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন দেয় সরকার।
সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পটি মিটারগেজের পরিবর্তে পুরোপুরি ব্রডগেজে নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে আপাতত রেলপথটি দোহাজারী থেকে রামু হয়েছে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। আর পরবর্তীতে রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় ধাপে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে স্বপ্নের দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণ কাজ আগামী আগস্টেই দৃশ্যমান হবে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
লাইন অ্যালাইনমেন্টও চূড়ান্ত। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি আগামী আগস্ট মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। এর আগেই নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, দুই লটে এই প্রকল্পের কাজ হবে। প্রথম লটে চারটি এবং দ্বিতীয় লটে তিনটি প্রতিষ্ঠান কারিগরি মূল্যায়নে টিকেছে। শিগগিরই দরপত্রের মূল্য খোলা হবে। এদের মধ্য যারা বা যে প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা তাদের চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি জানান, প্রথম লটে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ হবে। একই সঙ্গে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৪১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় লটে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ এবং কক্সবাজার আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ করা হবে। এই ধাপের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা ২০২১ সালের আগেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করতে চাই।
রেল সূত্র জানায়, সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা বা এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে উন্নয়ন সহযোগী এডিবি। এই রেলপথ যাবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ওপর দিয়ে। দুই জেলা প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রায় ১৮২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রেল সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮ কিলোমিটার মূল রেললাইন এবং ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ১৪০ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণ করা হবে। থাকবে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ১৪৫টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট।
হাতি চলাচলের যেসব পথ রয়েছে সেগুলোর জন্য নির্মাণ করা হবে প্যাসেজ। জানা গেছে, রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত অন্তত: ছয়টি সুনির্দিষ্ট পথ রয়েছে বন্যহাতি পারাপারের। এর বাইরে আরও অন্তত ৫/৬টি পথ রয়েছে। সবগুলো পথ চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে একজন বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তার পরামর্শ অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে প্যাসেজ।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ৯টি স্টেশন। এগুলো হলোÍ দোহাজারী, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামবাদ, রামু এবং কক্সবাজার। রামুতে হবে জংশন। আর কক্সবাজারের রেলস্টেশনটি আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের মতো নির্মাণ করা হবে। স্টেশনটি হবে ঝিনুক আদলে।