অগ্রসর রিপোর্ট :টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় কক্সবাজার জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৪১৩টি গ্রাম। সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ মারা গেছে ১২ জন। পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে প্রাণ গেছে এক রোহিঙ্গা শিশুসহ আটজনের। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে দুই দিনে ২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ৭১টি ইউনিয়ন এবং চারটি পৌরসভার মধ্যে ৪১ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সেখানে ৪১৩টি গ্রামের ৫৫ হাজার ১৫০ পরিবারের আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি পড়েছে। এসব প্লাবিত এলাকায় ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৫৮ গ্রাম, রামু উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৩৫ গ্রাম, চকরিয়া উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের ১০০ গ্রাম, পেকুয়া উপজেলার দুই ইউনিয়নের ছয় গ্রাম, মহেশখালী উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৩৮ গ্রাম, উখিয়া উপজেলার দুই ইউনিয়নের ১২০ গ্রাম এবং টেকনাফ উপজেলার চার ইউনিয়নের ৫৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের স্রোতে কক্সবাজার জেলায় দুটি সড়ক ভেঙে গিয়ে ঈদগড় ইউনিয়নের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে দুই লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে রামু উপজেলা থেকে ঈদগড় ইউনিয়নে যাওয়ার সড়কের পানের ছড়ার রামু সড়ক অংশ ও সদর উপজেলা থেকে ঈদগড় ইউনিয়ন যাওয়ার সড়কের সদর উপজেলা অংশে ভেঙে যায়।
ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহাম্মদ ভূট্টো বলেন, ‘পানের ছড়ার রামু সড়ক অংশে ১৫০ ফুট এবং সদর সড়ক অংশে ৫০ ফুট ভেঙে গেছে। ফলে গাড়ি চলাচলসহ মানুষের যাতায়াত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর সহায়তায় যোগাযোগ ও যাতায়াত সচল রাখার ব্যবস্থা করছি।’
এ দিকে তিন দিনের টানা বর্ষণে জেলার মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী ও ছোট-বড় কয়েকটি খাল-ছড়া দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এইকইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, সদরের ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামাবাদ, টেকনাফের হোয়াইক্যং, বাহারছড়া ইউনিয়ন, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, ডুলাহাজারা, চিরিঙ্গা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের কয়েক হাজার বাড়ি অন্তত পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
সামুদ্রিক জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকায় কয়েক ফুট উচ্চতায় আঘাত হানছে। এতে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবাগান।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ১৫০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ, পাঁচ লাখ নগদ অর্থ এবং নিহত সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলছে।
ডিসি জানান, এখন পর্যন্ত জেলার ৬০ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। তাদের সেখানে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।