আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘরে ক্রমেই বিশৃঙ্খলার ঘেরাটোপে জড়িয়ে পড়তে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে প্রথম বৈদেশিক সফরে যাচ্ছেন। এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলোসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
শুক্রবার বিকালে সফরের শুরুতেই সৌদি আরবে আসছেন তিনি। এরপর আগামী সপ্তাহে তিনি ইসরায়েল, বেলজিয়াম এবং ইতালিতে যাবেন।
এ সফরের ফলে দেশে ট্রাম্পকে ঘিরে গজিয়ে ওঠা নানা বিতর্ক থেকে সবার নজর আপাতত তার বৈদেশিক নীতির ওপর গিয়ে পড়বে বলে মনে করছে হোয়াইট হাউজ।
কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা বিহীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য সফরটিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসাবে দেখা হচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প তার গুরুত্বপূর্ণ এ প্রথম বৈদেশিক সফর কোনও বিপর্যয় ছাড়া উতরে যেতে পারলে এটি তার সফলতা বলেই গণ্য হবে।
দেশে একগাদা সমস্যার মুখে ট্রাম্প এ সফরে যাচ্ছেন। আমেরিকাকে সর্বাগ্রে রাখার বার্তা দিয়ে তিনি মিত্রদের উদ্বেগ দূর করার চেষ্টার সময় একইসঙ্গে তার পায়ে পায়ে বিরাজ করবে ঘরের সব সমস্যাগুলোও।
ট্রাম্পের এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্ত করার পদক্ষেপ থেকে শুরু করে ফ্লিন-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে কোমিকে তার তদন্ত বন্ধ করতে বলার কথা প্রকাশ হয়ে যাওয়া এবং এরপর ট্রাম্প-রাশিয়া যোগসাজশ তদন্তে সাবেক এফবিআই প্রধান রবার্ট মুলারের নিয়োগের মত নানা ঘটনায় ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আর কোনও প্রেসিডেন্টই ট্রাম্পের মত এত কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে প্রথম বৈদেশিক সফরে যাননি। ফলে তার সফরে এ বিষয়গুলো ছায়া ফেলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রিয়াদ এবং জেরুজালেমের নেতারা ট্রাম্পকে ঊষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক চুক্তি সম্পর্কে ট্রাম্পের মত নিয়ে প্রশ্ন আছে, নেটোর নিরাপত্তায় ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি নিয়েও আছে সংশয়, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারেও ট্রাম্প অনমনীয়। ব্রাসেলস এবং সিসিলি তে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
তারপরও ট্রাম্পের চার মাসের টালমাটাল শাসনের পর এ সফরকে আবার নতুন করে সবকিছু ঠিক হয়ে আসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার একটি সুযোগ হিসাবেই দেখছেন তার উপদেষ্টারা।
ট্রাম্পের সফরের তিনটি উদ্দেশ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার বলেছেন, এ তিন উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব নতুন করে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে গড়া। সেইসঙ্গে আমেরিকার বন্ধুদেশগুলোসহ বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্মের মানুষের প্রতি একতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।
সাংবাদিকদেরকে ম্যাকমাস্টার বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সাধারণ স্বপ্নকে ঘিরে সব ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষকে একতাবদ্ধ করতে চাইছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রার্থী হিসাবে ট্রাম্প মুসলিম বিরোধী বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। ক্ষমতা নেওয়ার পর মুসলিমদেশগুলোর নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েও হৈচৈ ফেলে দেন তিনি।
কিন্তু সৌদি আরব সফরকালে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ইসলামের শান্তির ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার আশা নিয়েই বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছেন ম্যাকমাস্টার।
তিনি বলেন, ট্রাম্প এ বার্তাই দিতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং সভ্য দুনিয়ার সব মানুষই আশা করে তাদের মুসলিম মিত্ররা উগ্রবাদী এবং বিকৃত ইসলামি ভাবধারার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিক। তাছাড়া, ইসলামের শান্তির ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও ট্রাম্প মুসলিম নেতাদের আহ্বান জানাবেন।