স্টাফ রিপোর্টার: সফলভাবে সর্বপ্রথম মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে কলকারখানা, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সকল ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিয়ন্ত্রণ ডিভাইস (GMS Technology to Control home appliance from anywhere by SMS) আবিষ্কার করে চমক লাগিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাহাবুল হাসান (জিকু) নামের এক শিক্ষার্থী। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে ইবি সাংবাদিকদের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার এই যন্ত্রের ব্যবহারবিধি পরিচালনা করে সাংবাদিকদের দেখান।
এসময় জিকু তার ওই নব আবিষ্কৃত যন্ত্রটির ব্যবহার সম্পর্কে একটি নোট উপস্থাপন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, এটি একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র। এটা দ্বারা আমরা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে আমাদের বাসাবাড়ি, অফিস, কলকারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সকল ধরনের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এসএমএসের মাধ্যমেই বৈদ্যুতিক ‘যেমন- লাইট, ফ্যান, টিভি, এসি, মোটর, সেচ পাম্প, রেফ্রিজারেটরসহ যে কোন ধরনের যন্ত্রপাতি’ নিমিষেই বন্ধ ও চালু করা যাবে। এতে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয়ী হবে অপরদিকে অর্থ ও বিদ্যুতের অপচয় রোধ হবে।
কীভাবে এই যন্ত্রটি কাজ করে : এসএমএস এর ভিতর যে শব্দ বা নির্দেশনা লেখা থাকবে তার উপর ভিত্তি করে আমরা যেকোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। যেমন- আমরা যদি আমাদের অফিস বা বাসায় ব্যবহৃত কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র (ফ্যান, লাইট, মোটর) চালু করতে চাই তাহলে ‘অন’ লিখে ওই জিএমএস মডুলের সাথে সংযুক্ত সিম নম্বরটিতে এসএমএস দিলে সাথে সাথে এটি গ্রহণ করবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটি বন্ধ থাকলে চালু হয়ে যাবে। আবার ‘অফ’ লিখে এসএমএস দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটি চালু থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে। আর একই সাথে জিএসএম মডুলটি ট্রান্সজিস্টরের মাধ্যমে রিলাইটি সুইচিং করবে।
এছাড়াও এই যন্ত্রের মাধ্যমে আগামীতে জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে চুরি হওয়া গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা যাবে। এছাড়াও বড় বড় কারখানা, কর্পোরেট অফিস, ব্যাংকের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে।
এসময় জিকু সাংবাদিকদের জানান, তার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খলিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে দীর্ঘ ছয় মাস সময় লেগেছে। অর্থনৈতিক সংকট থাকায় মাত্র ৫ হাজার টাকায় প্রাথমিকভাবে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করা গেছে। ভবিষ্যতে কোথাও থেকে কোন আর্থিক সহায়তা পেলে আরও বড় ধরনের কিছু আবিষ্কার করা যাবে। তার এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের পিছনে রয়েছে একটি বাস্তব অনুধাবন শক্তি।
জিকু বলেন, আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। এখনো আমাদের মাঠে চাষাবাদ করার জন্য বৈদ্যুতিক মোটরচালিত সেচপাম্প রয়েছে। ছোটবেলায় ভোরবেলা আমি, আমার বাবা যখন ঘুমিয়ে থাকতাম তখন আমার দাদু আমাদের ডেকে মাঠে যেতেন ওই মোটরচালিত সেচপাম্প চালু করার জন্য। কিন্তু আমাদের ঘুম ভাঙত না। তখন থেকেই মনে মনে ভাবতাম ইশ! যদি ঘরে বসে থেকে মোটরটি চালু করে দিতে পারতাম। তাহলে প্রতিদিন দাদু আর আমাদের ঘুমের ডিস্টার্ব দিত না। এতে সময়ও সাশ্রয় হত। এই চিন্তা থেকেই আল্লাহর রহমতে আমার শিক্ষাজীবনে এসে এই যন্ত্রের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। এখন আমি বাসায় থেকে আমার মাঠের মোটর চালু করতে পারি। যেকোন ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালু এবং বন্ধ করতে পারি।
এ ব্যাপারে বিভাগের শিক্ষক ও জিকুর তত্ত্বাবধায়ক সহকারী অধ্যাপক খলিলুর রহমান জানান, রিমোট কন্ট্রোল, ব্লুটুথ ডিভাইসের পরেই সর্বপ্রথম দূর থেকে বৈদ্যুতিক সকল যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আবিষ্কার করেছে আমাদের ছাত্র জিকু। আমরা তাকে বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছি। আশা করছি ভবিষ্যতে সে আরও ভালো কিছু আবিষ্কার করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খলিলুর রহমান, ইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমামুল হাসান আদনান, ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজ, সহ-সভাপতি নাজমুস সাকিবসহ সকল অনলাইন, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক ও বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
জিকু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। তার বাবা মো. মওলা বকশ কেরু এন্ড কোং এ চাকরি করেন। তারা তিন ভাই।