ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনী। কিন্তু সশস্ত্র জলদস্যুরা জাহাজের নাবিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখায় জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ভারতীয় নৌবাহিনীর মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স অ্যাকাউন্ট ‘স্পোকসপার্সন নেভি’ থেকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে রোববার বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং লং রেঞ্জ মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট (এলএরএমপি) এগিয়ে গিয়েছিল।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই বিমানটি ছিল দূরপাল্লার পিএইট-আই বিমান।
১২ মার্চ বিকেলে এমভি আবদুল্লাহর অবস্থান চিহ্নিত করার পর ক্রুদের অবস্থা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ভারতীয় নৌবাহিনী। কিন্তু তখন এমভি আবদুল্লাহ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ওই অভিযানে মোতায়েন করা ভারতীয় নৌবাহিনী ফ্রিগেট আইএনএস তর্কশ বৃহস্পতিবার সকালে ছিনতাই হওয়া এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি যায়।
কিন্তু এমভি আবদুল্লাহর বাংলাদেশি নাবিকরা সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকায় তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে তারা।
ভারতীয় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, “হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হয়নি কারণ এতে নাবিকরা হতাহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আমাদের যুদ্ধজাহাজটি কাছাকাছি থেকে এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছিল।”
ভারতীয় নৌবাহিনীর এক্স বার্তায় বলা হয়, এরপর এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করা পর্যন্ত কাছাকাছি দূরত্বে থেকে জাহাজটিকে অনুসরণ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ।
চলতি বছর ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়া দুটি ইরানি ফিশিং ট্রলার আক্রান্ত হওয়ার দিনই অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী। ফিশিং ট্রলার দুটির নাবিকদেরও তারা উদ্ধার করেছিল।
বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জাহাজটি নিয়ে জলদস্যুরা যখন সোমালি উপকূলে পৌঁছায়। সেসময় দুটি সামরিক জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছিল।
এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টা ইতিমধ্যে আবদুল্লাহকে অনুসরণের বিষয়টি একাধিকবার জানিয়েছে। এবার ভারতীয় নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজ নিয়ে এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যু কবল থেকে উদ্ধারের চেষ্টার বিষয়টি জানাল।
বৃহস্পতিবার অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেন, “গতকাল (বুধবার) একটা নেভি জাহাজ আসছিল, আজকেও একটা আসছে। টোটাল দুইটা এসে আমাদের রেসকিউ করতে চাইছিল। বাট পসিবল না, কারণ ওরা তখন আমাদের মাথায় গান ধরে জিম্মি করে রাখে। নেভি জাহাজ ফ্রিগেট আসলে তারা আমাদের জিম্মি করে।”
সবশেষ শুক্রবার রাতে জানা যায়, এমভি আবদুল্লাহকে সোমালিয়া উপকূলের গারাকাড এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে জলদস্যুরা। জাহাজে জলদস্যুর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে যে স্থানে জাহাজটিকে নোঙর করা হয়েছিল, সেখান থেকে উত্তর অভিমুখে ৪৫-৫০ মাইল দূরে জাহাজটি আছে এখন। ওই স্থানটি গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ মাইল দূরে।