অগ্রসর রিপোর্ট : আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার এমনভাবে আইন সংস্কারের কাজ করছে যাতে ভবিষ্যতে আরেকটি ফ্যাসিবাদী সরকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
আজ দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে আয়োজিত ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আইন ও বিচার ব্যবস্থায় এমন সংস্কার আনতে চাই, যাতে কোনো স্বৈরাচারী সরকার বা শাসক দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রুল অব ল ভঙ্গ বা স্বেচ্ছাচারিতা করতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, স্বৈরশাসকদের জন্য আইন কঠোর করা হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, আইন প্রণয়নের জন্য বিস্তৃত আলোচনা ও সংসদে একাধিকবার খসড়া রিভিউ করার প্রক্রিয়া থাকে। তবুও আমরা দ্রুত এ কাজ এগিয়ে নিচ্ছি, কারণ সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলো জনকল্যাণমূলক আইন প্রণয়নে খুব বেশি আগ্রহী নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক কিছুই করার চেষ্টা করছি। কাজ করছি। তারপরও অনেকে প্রশ্ন করছেন, কোথায় সংস্কার? আবার কেউ বলছেন, কেন এত দ্রুত? যারা সমালোচনা করেন, তাদের মানসিকতারও কিছুটা পরিবর্তন দরকার। আমরা এমন অনেক কাজ করেছি, যা আগে কেউ করেনি। কিছুদিন আগে প্রণীত সাইবার সুরক্ষা আইনের সংশোধনী আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রশংসা করেছে। আমরা এটার জন্য গভীরভাবে কাজ করেছি। আমাদের এই সংস্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে এখন অনেক বেশি স্বাধীনভাবে সমালোচনা করা সম্ভব, যা আমাদের বড় ধরনের সংস্কার হিসেবে আমরা দেখছি।
মামলার জট কমাতে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্টে বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষত পেটি অফেন্স, আপোষযোগ্য মামলা, পারিবারিক মামলা এবং এনআই অ্যাক্টের মামলার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড ছাড়া মামলা দায়ের করা যাবে না, তা আদালতের আগে গ্রহণযোগ্য হবে না।
এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইজিপি বাহারুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী শিশির মনির, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ওমর ফারুক ফারুকী, মো. ইকবাল হোসেন ও মো. বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনসহ অনেকে।
আইজিপি বাহারুল আলম আইন উপদেষ্টাকে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এর আগে এমন আলোচনা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এবারই প্রথম পুলিশের প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে এই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খসড়ায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা করার কথা থাকলেও কারা এটি করতে পারবে তা উল্লেখ নেই, থাকলে ভালো হতো।
ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, খসড়ায় ম্যাজিস্ট্রেটদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানো একটি সময়োপযোগী বিষয়। তবে, এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। একইসঙ্গে ‘পুলিশ’ এবং ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’কে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করলে বিভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব হবে।
খসড়া অনুযায়ী বেত্রাঘাতের বিধান বাতিলের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে গত ২৫ বছর ধরে যে সংস্কারের জন্য আমরা অপেক্ষা করেছি তা পূরণ হবে।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ অ্যাক্ট, প্রিজন্স অ্যাক্ট, প্রিজনার্স অ্যাক্ট ও জেল কোডের ভেতর থেকে ঔপনিবেশিক ধারা বাদ দিতে হবে।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে প্লী বারগেইনিং প্রবর্তনের যৌক্তিকতা, শাস্তি ঘোষণার আগে কনডেম সেলে পাঠানো না করা, গ্রেফতার বা আটক কেবলমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী করা, আটক ব্যক্তিকে থানার বাইরে কোথাও নেওয়ার অনুমতি না দেওয়া, মামলাজট নিরসনে আপোষযোগ্য অপরাধের আওতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
সমাপনী বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা সবাইকে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় সংশোধন নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করে চূড়ান্ত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।