অগ্রসর রিপোর্ট : সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া, জেকেজি-কাণ্ডে গ্রেপ্তার ডা. সাবরিনার একাধিক এনআইডি থাকা, নাম জালিয়াতি করে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের এনআইডি নেয়াসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রমে আরো নিরাপত্তা জোরদারের যৌক্তিকতা উঠে এসেছে।
এসব কারণেই এনআইডির নিবন্ধন কার্যক্রমে নিজেদের অংশের দায়িত্ব নিতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুরো এনআইডি কার্যক্রম নয়, নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানে শুধু নিবন্ধন অংশের দায়িত্বটা তারা চায়। এতে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও লোকেশন ও জন্ম-মৃত্যুর তারিখ জানা, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনসহ আনুষঙ্গিক কাজ সহজেই করতে পারবে মন্ত্রণালয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ইসির আওতায় থাকা অনুবিভাগের নিবন্ধন ও স্মার্টকার্ড প্রিন্টসহ নিজেদের আনুষঙ্গিক কাজের দায়িত্ব পুরোটা পেলে এতে ফিরবে শৃঙ্খলা, বাড়বে কাজের গতি।
কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এখন শুধু ভোটের জন্য কিংবা সংস্থার বিষয় নয়। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা জড়িত। এর মাধ্যমে ২২ ধরনের সেবা পাওয়া যায়। এর মধ্যে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। এটা দিয়ে পাসপোর্ট হচ্ছে, ব্যাংকের কাজ হচ্ছে। ইন্টারেনেটের অনেক পরিষেবায়ও এখন এনআইডির তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর এর বাস্তবতা, গ্রহণযোগ্যতাসহ সামগ্রিক বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত চেয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। সবকিছু বিবেচনা করে মতামত দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সোলতান আহমদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটির একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্সের (সিআরভিএস) কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নেয়া হয়েছে।
সংবিধান ও ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’সহ সব প্রয়োজনীয় বিধিবিধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলার কৌশল সুপারিশ, স্থানান্তরে কী কী আইন, বিধি ও অবকাঠামো পরিবর্তন করা প্রয়োজন, তা নিরূপণ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রথম বৈঠকে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইসির এনআইডি আইন এবং সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে কতুটুকু ক্ষমতা দেয়া আছে, সেগুলোর পর্যালোচনা করছে কমিটি। এনআইডি অনুবিভাগের অবকাঠামোগত অবস্থা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত এর জনবলসহ সবকিছুই বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই মতামত দেবে কমিটি। আর এই কমিটির মতামত পেলে উচ্চপর্যায় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সোলতান আহমেদ ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। আমাকে প্রধান করে কমিটি হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
তবে বিষয়টি এমন সময় সামনে এল, যখন একাধিক এনআইডি জালিয়াতির বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এনআইডি উইং বরাবরই বলছে, জালিয়াতি রোধে তারা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে আছে। ইতোমধ্যে অনেককেই দেয়া হয়েছে শাস্তি।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘পুরো সিস্টেম এর সঙ্গে জড়িত। এগুলো ঠিক করতে হবে। জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্ব, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ওয়ারিশন সনদ সঠিক পেলে আইনগতভাবে এনআইডি উইং জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এসব স্টেজে জালিয়াতি হয়ে এলে আমাদের একার পক্ষে এ ধরনের দুর্নীতি রোধ করা অত্যন্ত কঠিন।’
সাইদুল ইসলাম বলেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৯ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এনআইডিতে জড়িত অবকাঠামোসংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৭১ জনের মধ্যে মাত্র আছেন ৪৮ জন। এত অল্প মানুষ দিয়ে এত বড় প্রকল্পের দেখভাল করা কঠিন।’