অনলাইন ডেস্ক- এবার ধর্ম নিয়ে কথা বললেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। বললেন, আল্লাহর ৯৯ গুণবাচক নাম কাফেরদের দেবতাদের নাম ছিলো। এগুলো ইসলাম ‘এডপ্ট‘ করে, পরে বাংলা ভাষাও এডপ্ট করে। এগুলো এখন আরবি শব্দ। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন আবু হুরায়রা নামের অর্থ হচ্ছে বিড়ালের বাবা, আবু বকর নামের অর্থ হচ্ছে ছাগলের বাবা। এভাবে আমরা অনেকে নাম রাখি। তিনি বলেন, সাত শ’ বছর ধরে আমরা ‘নামাজ’, ‘খোদা হাফেজ’ শব্দ বলেছি। এখন ‘সালাত’, ‘আল্লাহ হাফেজ’ শব্দে পরিণত হয়েছে। এগুলো ওহাবিদের সৃষ্টি। তিনি নিজে কিছুদিন মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন দাবি করে বলেন, এখন যে ইসলাম ধর্ম চলছে তা বাড়াবাড়ির ইসলাম। রসুলুল্লাহর (সা:) সময় মেয়েরা কাবা ও রওজা শরিফের মধ্যে প্রবেশ করতে পারতো। এখন পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে আব্দুল গাফ্ফার বলেন, আমেরিকানরা তালেবান সৃষ্টি করে এখন বিপদে পড়েছে। আর বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দ্বীনে মোহাম্মদী নয়, তারা হচ্ছে দ্বীনে মওদুদী। হিজাব এবং বোরখা হচ্ছে মওদুদীর শেষ মতবাদ। আর জামায়াতে ইসলামী এক সময় কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রির পয়সায় চলতো। আমেরিকার পতনের সাথে সাথে এদেরও পতন হবে। শুধু শুধু সাদ্দাম ও গাদ্দাফিকে হত্যা করা হলো ইসরাইলকে নিরাপদ করার জন্য।
তিনি বলেন, আল্লাহর রহমত বাংলাদেশ যদি পাকিস্তান থেকে আলাদা না হতো বাংলাদেশেও আজ তালেবান হামলা হতো। রক্তের গঙ্গা বয়ে যেতো।
সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী এখানে (নিউ ইয়র্ক) কী বলে গেছে, এর জন্য আজও বাংলাদেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক লেকচার সিরিজে একমাত্র বক্তা হিসাবে এসব কথা বলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, হিন্দুদের মধ্যে যেমন গোরামি আছে, ইসলাম ধর্মেও মধ্যেও গোরামি আছে। ইসলাম ধর্মে আছে, বিধর্মীকে কতল করো। তাহলে তো রসুলুল্লাহ (সা:) মক্কা জয়ের পর একটি কাফেরকেও হত্যা করেননি। তিনি বলেন, অমুকে রসুলুল্লাহ (সা:)-এর বিষয়ে ব্লগে লিখেছে বলে তাকে কতল করতে হবে।
আমি বেঁচে থাকবো কি না জানি না, তবে আজকে একটা কথা বলতে পারি আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে দুটি রাষ্ট্র বিলুপ্তি হবে। কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এ দুটি রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান ও ইসরাইল। একটি দেশ দক্ষিণ এশিয়াকে অশান্ত করে রেখেছে, আরেকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্তির মধ্যে রেখেছে। আমেরিকার পতনের সাথে সাথেই এদের পতন হবে। সৌদি আরবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর নাম সৌদি আরব হবে কেন। তারা রসূলের (সা:) অনুসারী হলে এর নাম হবে মোহাম্মদিয়া। কাবা শরিফের দরজাগুলোর নাম বাদশাহদের নামে দেয়া হয়েছে। কোনো সাহবিদের নামে নয়।
বোরখা এবং হিজাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল গাফ্ফার বলেন, এটা হচ্ছে ওয়াহাবিদের সর্বশেষ মতবাদ। বাংলাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা ও আচার-আচরণ প্রসঙ্গে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে একটা সময় ইরানের ধর্মীয় আচার-আচরণের প্রভাব ছিল। সম্প্রতিকালে সৌদি আরবের আচার-আচরণ বইছে। আগে খোদা হাফেজ বলতাম, এখন বলা হয় আল্লাহ হাফেজ। নারীদের উৎসাহিত করা হয় হিজাব পরতে। হিজাব একটি আরব সংস্কৃতির পোশাক, বাঙালির নয়। বাংলাদেশে নারীদের শাড়ি-টিপ পরা – এগুলোর সবই হিন্দুত্ব উল্লেখ করে আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, একবার প্রেসক্লাবের সামনে কিছু নারী ভারতীয় পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করছিলেন। তাদের সবার পরনে ছিল ভারতীয় শাড়ি। তিনি বাংলাদেশে বিয়েতে হিন্দুত্বের প্রভাব প্রসঙ্গে বলেন, বিয়েতে সাত পকে বাঁধা ছাড়া সবই আমরা করে থাকি। বর্ষবরণ থেকে শুরু করে সর্বত্রই মিল রয়েছে।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানিতে আমরা ওজু করতে পারবো না, অথচ গঙ্গার পানির হিস্যা চাচ্ছি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরশাদ আগে আটরশি পীরের কাছে যেতেন। এখন সবাই মাজারে যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর আর কিছু থাকে না। মেজর জিয়া একটি বাণী পাঠ করলেই স্বাধীনতার ঘোষক হয়ে যেতে পারেন না। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ঘৃণা করেন উল্লেখ করে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মেজর জিয়ার সঙ্গে এক মাস থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। জিয়া কখনো যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করেননি। তিনি শুধু পকেট থেকে চিরুনি বের করে চুল ঠিক করতেন আর খবর নিতেন কোনো রাষ্ট্রদূত আসছে কি না। আমি ওই সময় থেকেই জিয়াকে ঘৃণা করি। এছাড়া পরে তার জেড ফোর্সই ভেঙে দেয়া হলো।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার প্রসার না ঘটলে জামায়াতসহ ইসলামী মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অসম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলে আশংকা করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দোষ-ত্রুটি আছে। তারপরও বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে এবং শিক্ষা ও অর্থনীতিতে আরো উন্নয়ন ঘটালে দেশ একটি ঈর্ষণীয় গন্তব্যে পৌছতে পারবে। তিনি বলেন, যত দিন আমাদের ভাষা থাকবে, রবীন্দ্রনাথ থাকবে, বঙ্গবন্ধু থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে তালেবান ধ্বংস করতে পারবে না। আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, মৌলবাদী রাষ্ট্র আমরা চাই না, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। বাংলাদেশে একবার স্বৈরাচার আইয়ুব এসে বলেছিলেন বাঙালিরা হচ্ছে দাসের জাতি, বুটের তলায় পৃষ্ঠ জাতি।
তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিকল্প নেতা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার পর এই দলের নেতৃত্বে কে দেবেন এটা নির্ধারণ করা হয়নি। এটি নির্ধারণ না হলে বিরোধীরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে যেতে পারে। বর্তমান বিরোধী দলকে প্রয়োজনে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি সংসদ বর্জন করার কারণে এ বিরোধী দল তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থ বিরোধী দল তৈরি কঠিন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন করা যায়। একজন মুসলমান তার ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রিস্টান হতে পারেন। কিন্তু জাতীয়তা পরিবর্তন করা যায় না। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি, এর ব্যবহার, হাজার বছর আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা বর্জনের ইতিকথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক ভাষার শব্দ এসে মিশে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। কাজী নজরুল ইসলাম তার অনেক কবিতায় আরবি ও ফার্সি শব্দ ব্যবহার করেছেন। এজন্য তাকে সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথও নজরুলের সমালোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ চলিত বাংলার চেয়ে সাধু বাংলার প্রতি সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মুখের কথাই আজ বাংলা ভাষার সম্ভার। এই ভাষা বাংলাদেশ থেকে কখনও হারিয়ে যাবে না।
অনুষ্ঠানে আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা স্মারক ও গ্রন্থ প্রদান করা হয়। তথ্যসূত্র: নয়াদিগন্ত