অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার আহবান জানিয়ে আজ বলেছেন যদি দুর্নীতিবাজ আর জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশ দুর্নীতিবাজদের দখলে চলে যাবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা দোয়া করবেন এবং আগামী নির্বাচনে- যে নির্বাচনই আসুক, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। তাহলেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।’ শেখ হাসিনা আজ রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান সুগার মিল মাঠে আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ঐ লুটেরা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যারা সৃষ্টি করেছে তারা ক্ষমতায় আসলে এই দেশ জঙ্গিবাদের দেশ হবে, সন্ত্রাসের দেশ হবে।’
ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে কোন দরিদ্র থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে ৫ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার ওপরে উঠে এসেছে। আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বসভায় আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করবেন এবং আগামী নির্বাচন- যে নির্বাচনই আসুক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীতে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। তাহলেই উন্নযনের ধারা অব্যাহত থাকবে। ঐ লুটেরা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যারা সৃষ্টি করেছে তারা ক্ষমতায় আসলে এই দেশ জঙ্গিবাদের দেশ হবে, সন্ত্রাসের দেশ হবে।
পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
প্রধানমন্ত্রী এদিনকার পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের বর্ণনা দিয়ে রাজশাহীবাসীর কাছে খালি হাতে আসেননি উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রাজশাহীকে রক্ষার জন্য বাঁধ আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি। আরো যেসব অঞ্চল ভাঙ্গনপ্রবণ সেসব অঞ্চলেও যাতে ভাঙ্গন রোধ হয় তার প্রকল্পও আমরা হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন, এবারে কোন কোন এলাকায় বন্যা হয়েছে এবং বৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেকটি অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বন্যায় যত রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়েছে ইনশাল্লাহ সব আমরা মেরামত করে দেব।
সরকারের তৈরী করে দেয়া রাস্তা-ঘাট রক্ষণাবেক্ষণের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আমি বলবো, এগুলোর যেন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। যে কাজগুলো তাঁর সরকার করে দিচ্ছে সেগুলো যেন ভালভাবে হয়, তার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য তিনি সকলের প্রতিও আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বৃষ্টি ভেঙ্গে জনগণের আগমনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি জানি কিছুক্ষণ আগেও আজ এখানে মুসলধারে বৃষ্টি হয়েছে। আমি সারদাতে ছিলাম (পুলিশ একাডেমীতে) পাসিং আউট প্যারেডে তখনও বৃষ্টি। সেই কাদামাটি পায়ে মেখে আপনারা কষ্ট করে এই মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন, কষ্ট করে এসেছেন। তাই আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি শুধু এইটুকু বলবো, আপনাদের যে এই আন্তরিকতা, আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতি আপনাদের যে সমর্থন এটা আমরা কখনো ভুলবো না। তাই রাজশাহীর মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয়-আমরা তা করে যাব।
রাজশাহীতে কৃষি উৎপাদন বহুমুখীকরণে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময়ে এখানে সুগার মিলসহ রাজশাহীর অনেক কিছু নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল, এক সময় এই রাজশাহীতে শুধু আম, হলুদ, আদা ছাড়া কিছ্ইু হত না। এখন সেই রাজশাহীতে কৃষি উৎপাদন বহুমুখীকরণ করা হচ্ছে। আরো ব্যাপকভাবে শাক সবজী ফলমূল যাতে উৎপাদন হয়, মাছের উৎপাদন বাড়ে-সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। প্রত্যেক এলাকার মজা পুকুরগুলো সংস্কার করা এবং সেখানে যাতে পানি থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। সমস্ত খালগুলো খনন ও পুনখনন করে জলাবদ্ধতা আমরা দূর করে দিচ্ছি। সার্বিকভাবে যত উন্নতি দরকার তা আমরা করে দেব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইতোমধ্যেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাথে সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষির ওপর যাতে আরো উন্নত গবেষণা হয়, তারজন্য যে সব ফ্যাকাল্টি রয়েছে, সেগুলোও আমরা আরো উন্নত করে দেব যেন কৃষির ওপর আরো গবেষণা হতে পারে। এই রাজশাহীতে গবাদি পশু, মৎস্য শাক সবজীর উৎপাদন বাড়িয়ে আমিষের অভাব যাতে দূর হয় তাঁর উদ্যোগও আমরা নেব। মঙ্গা দূর করায় সরকারের সাফল্যে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত এইটুকু দাবি আমরা করতে পারি এই উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা ছিল, সেই মঙ্গা এখন আর নাই। আর কোনদিন মঙ্গা আসবেও না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার বন্যার কারণে কোন কোন জায়গার ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই খাদ্য কেনা শুরু করেছি। প্রত্যেকটা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করছি। নদী ভাঙ্গনের ফলে যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, তাদেরকে ঘরবাড়ি আমরা তৈরী করে দেব। ইতোমধ্যে সেই তালিকাও করা শুরু হয়েছে। ঘরেরদোরে স্বাস্থ্যসেবাকে পৌঁছে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন এবং ৩০ প্রকারের ওষুধসহ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রসংগও উল্লেখ করেন।
তিনি স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের সরকারের অন্যান্য উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে আমরা উন্নত করছি।
তিনি বলেন, স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম আমরা করে দিচ্ছি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রজেক্টও দেয়া হচ্ছে -যেন ছেলেমেয়েরা তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থাও তাঁর সরকার করেছে এবং এভাবেই দেশের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে, আওয়ামী লীগ আপনাদের সংগঠন। এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন যখন এই আওয়ামী লীগ এবং নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নতি হয়। কিন্তু ঐ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি হয়, মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এমনকি জনগণের টাকা, এতিম খানার টাকা- সেটাকাও তারা চুরি করে খায়। বিদেশে বিত্ত-বৈভব বানায়। এটাই তাদের চরিত্র যে-দেশের মানুষের সম্পদ লুঠ করে নিজেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম সহ সকল পেশাজীবীদের কাছে আমি একটি আবেদন রেখে যাব- এই বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের স্থান হবে না।’ তিনি সকলকে তাদের ছেলেমেয়ে যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে তারা কোথায় যায়, কারসঙ্গে মেশে, কি করে এ বিষয়ে যেন বিশেষ নজর রাখেন তার প্রতি অনুরোধ জানান। স্কুল কলেজে কোন শিক্ষার্থী অনেক দিন ধওে অনুপস্থিত কিনা তা লক্ষ্য রাখার জন্যও শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। মাদকাশক্তি এবং জঙ্গিবাদ থেকে নিজ নিজ সন্তানদের দূরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মত মেশার ও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের ছেলে-মেয়েরা বিপথে চলে গেল কিনা অভিভাবক-শিক্ষকদের অবশ্যই তা দেখতে হবে।’ এ সময় তিনি মসজিদের ইমামদের কাছে শান্তির ধর্ম ইসলামের মূলমর্মবানী জনগণের কাছে তুলে ধরার আহবান জানান।
১৫ আগস্টের বেদনাবিধূও অধ্যায় স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা শোক মানুষ সইতে পারে না। আর আমি ও আমার ছোট বোন (শেখ রেহানা) একই দিনে মা,বাবা, তিনটি ভাই ও ভাইদের স্ত্রী, চাচাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারিয়েও দেশে ফিরতে পারি নাই। আমাদের দেশে ফিরতে দেয়া হয় নাই। আর আমরা যখন বাংলাদেশে এসেছি সেই শোক ব্যথা বুকে নিয়েও আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। যার একটাই কারণ আমার বাবা চেয়েছিলেন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এদেশের দুঃখী মানুষ দু’বেলা পেট ভরে ভাত খাবে। দুঃখী মানুষ একটু উন্নত জীবন পাবে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, আপনারা ভোট ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বলেই আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা দারিদ্রের হার কমিয়ে এনেছি এবং বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের দোয়া চাই, সহযোগিতা চাই। আর আপনাদের মাঝে আমি ফিরে পেতে চাই আমার হারানো বাবার ¯েœহ, মায়ের ¯েœহ, হারানো ভায়ের ¯েœহ। আপনারা শুধু দোয়া করবেন- যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দায়িত্ব যেন পালন করতে পারি। এ সময় বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হবার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না এবং একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না। শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে ইনশাল্লাহ অধিষ্ঠিত করবো-ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।