অগ্রসর রিপোর্ট : বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
এদিকে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট’র ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের প্রশংসা করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার শর্ত সাপেক্ষে বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদানে সহায়তার করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ২৭টি কনভেনশন অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
আজ দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সাথে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট’র (ইইউ) ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির চেয়ারম্যান বার্ন্ড লেংগ-এর নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের প্রশংসার পাশাপাশি এদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তৈরী পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম আইন সংশোধন, নিরাপদ ও কর্মবান্ধব কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ইইউ পার্লামেন্টারি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীক অংশীদার। বাংলাদেশ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি করে, এর মধ্যে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে এভ্রিথিংস বাট আর্মস (ইবিএ) অর্থাৎ অস্ত্র ছাড়া সকল পন্যে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দিয়ে আসছে।
অপ্রত্যাশিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরী পোশাক কারখানাগুলোর বিল্ডিং ও ফায়ার সেফটি, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কর্মবান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার এবং কারখানার মালিকদের গৃহীত পদক্ষেপে প্রতিনিধি দল সন্তুষ্ট বলে তোফায়েল আহমেদ জানান ।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এলডিসিভুক্ত ৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, এজন্য বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন।
‘বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা খুশি’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে, ভবিষ্যতে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে আরো উন্নয়নে কাজ করাও সম্ভব হবে।
বার্ন্ড লেংগ বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক সেক্টরে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে। কারখানার নিরাপত্তা, শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপদ কাজের পরিবেশ এর অনেক উন্নতি হয়েছে, শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ সেক্টরে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সন্তোষজনক।
ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাঙ্গালী বীরের জাতি, অনেক প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবেলা করে এ দেশ আজ এ অবস্থানে এসেছে। তৈরী পোশাক খাতে ১৯৯০ সালে শিশু শ্রম বন্ধের চ্যালেঞ্জ এসেছিল, পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির কোটা পদ্ধতি তুলে নেয়া হয়েছিল, অনেকেই মনে করেছিল বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত আর এগুতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ সফলভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিশু শ্রম বন্ধ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বেড়েই চলছে। জিএসপি প্লাস পেতে বাংলাদেশ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন।
প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, সাউথ এশিয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান জিয়েন ল্যামবাট ও ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অফ ডেলিগেশন পিয়েরে মাইদুন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) জহির উদ্দিন আহমেদ, ডিজি, ডব্লিউটিও (অতিরিক্ত সচিব) শুভাশীষ বসু, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব (এফটিএ) মুনির চৌধুরীসহ বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।