স্টাফ রিপোর্টার: আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি’র বিরুদ্ধে দায়ের করা দুই মামলার বিচার শুরু হয়নি। অভিযোগ গঠন না হওয়ায় বার বার সময়ের আবেদন এবং অধিক সংখ্যক আসামি হওয়ায় আলোচিত মামলা দুটির মূল বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না বলে মনে করছেন রাষ্ট্র ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য এ পর্যন্ত ৩৬টি তারিখ ধার্য করা হয়। প্রতি তারিখেই আংশিক শুনানি করে সময় চেয়ে আবেদন করেন উভয় পক্ষের আইনজীবী। সর্বশেষ মামলা দুটি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে আগামী ২১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন শুনানি জন্য ধার্য রয়েছে।
দুদক-এর আইনজীবী (পিপি) মীর আহম্মেদ সালাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে এ বিষয়ে বলেন, ‘ডেসটিনির দুই মামলায় খুব দ্রুত অভিযোগ গঠন করা হবে। মামলায় আসামি সংখ্যা বেশি হওয়ায় শুনানিতে সময় লাগছে। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আংশিক শুনানি করে আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ডেসটিনির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত দুই মামলার আসামির সংখ্যা ৫১ জন। আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির করতে সময় বেশি লাগছে। এ কারণেই মূলত উভয় পক্ষের জন্যই অভিযোগ গঠন শুনানিতে একটু সময় বেশি লাগছে।’
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সোসাইটির বোর্ডসভায় অনুমতি না নিয়ে সদস্যদের অগোচরে প্রলোভন দেখিয়ে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড গ্রুপের পরিচালকরা বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ডেসটিনির পরিচালকরা ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন, যা আইনের পরিপন্থী।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের (অর্থ পাচার) অভিযোগে ডেসটিনির বিরুদ্ধে দুদক রাজধানীর কলাবাগান থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। দুদকের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিক দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে পৃথক দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ডিটিপিএল ও ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীনসহ ৫১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলা দুটির মধ্যে একটিতে ১৯ জনের বিরুদ্ধে আর অন্যটিতে ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। দুটি মামলায় একই ব্যক্তি একাধিকবার আসামি হওয়ায় মোট আসামির সংখ্যা ৫১।
২০১৪ সালের ৪ মে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ এক হাজার ১৮২ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগে ডেসটিনির ৫১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় করা মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও সাতজনের নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলায় দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা পাচারের অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— ডিটিপিএল ও ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডিটিপিএলের চেয়ারম্যান ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ, ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ডেসটিনি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক (ডেসটিনির সাবেক পরিচালক ও ডিএমডি), ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান (ডেসটিনির সাবেক পরিচালক), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মেজবাহ উদ্দিন (সাবেক পরিচালক), ডেসটিনির পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় করা মামলায় ২২ জনকে আসামী করা হয়। পরে তদন্তে আরও ২৪ জনের নাম আসামীর তালিকায় যুক্ত করা হয়। মামলায় এক হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৫ টাকা পাচারের অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
মামলার উল্লেখ্য যোগ আসামীরা হলেন— ডেসটিনির এমডি ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-আর-রশিদ, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ গোফরানুল হক, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মো. মেজবাহ উদ্দিন (স্বপন), ডেসটিনির পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন।