বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার আমতলীর গোছখালী গ্রামে শুক্রবার বিকেলে পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী মিলে পিটিয়ে সুজন চন্দ্র মন্ডল (২৫) নামে এক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন মামলা না করার জন্যও ওই পরিবারটিকে শাসানো হচ্ছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটির লোকজন।
একালাবাসী এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গোছখালী গ্রামের নিমাই চন্দ্র মন্ডলের ছেলে সুজন চন্দ্র মন্ডল ভাড়ায় এলাকায় মটর সাইকেল চালান। ওই একই গ্রামের চান মিয়া দফাদারের ছেলে টিটু দফাদার প্রায়ই সুজন মন্ডলের মটর সাইকেলে বাকিতে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়ত করেন। এতে তার ভাড়া বাকি পড়ে সাড়ে ৬শ’টাকা।
শুক্রবার বিকেলে গোছখালী বাজারে বসে ভাড়ার ওই ৫শ’ টাকা চাইতে গেলে টিটু দফাদারের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে টাকা চাওয়ার অপরাধে ক্ষিপ্ত হয়ে টিটিু দফাদারের নেতৃত্বে মঞ্জু দফাদার, হাসান আকন, সুমন দফাদার, জাকির হোসেন, হৃদয় দফাদারসহ ৬-৭ জন সন্ত্রসী মিলে সুজন মন্ডলের উপর হামলা করে। তারা লোহার রড এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সুজনের বাম হাত ভেঙ্গে দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এসময় সন্ত্রাসীরা সুজনের মটর সাইকেলটিও পিটিয়ে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে।
স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে শুক্রবার রাতে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর আগেও বিকেল ৪টার সময়ও টিটুর সাথে ভাড়ায় যেতে রাজি না হওয়ায় বাড়ির দরজার সামনে বসে সুজন মন্ডলকে মারধর করে টিটু দফাদার ও তার লোকজন বলেও অভিযোগ করেন সুজন মন্ডলের পরিবার।
সুজনের বড় ভাই সমির মন্ডল জানান, পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে সুজনকে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাম হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাত্ব জখম করেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে চোর ডাকাতকেও কেউ পিটায়না। তিনি আরো জানান, টিটু দফাদারের রয়েছে এলাকায় ৬/৭ জনের একটি বাহিনী তাদের ভয়ে এলাকার লোজন তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়না। আমরা এখানে মাত্র কয়েক ঘড় হিন্দু পরিবার রয়েছি। আমাদের উপর কারনে অকারনে নির্যাতর ও হামলা করে। এমনকি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। তিনি আরো জানান, এঘটনায় আমরা যাতে থানায় মামলা না করি সে জন্যেও হুমকি দিচ্ছে। ফলে এখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গোছখালী বাজারের চা বিক্রেতা মো: ইব্রাহিম জানান, পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে সুজনকে রাস্তায় ফেলে টিটু দফাদারের নেতৃত্বে ৬/৭ জন সন্ত্রাসী বাহিনী লাঠি ও লোহার রড় দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয় এবং মারাত্মক জখম করে। টিটুর ভয়ে আমরা কেউ সুজনকে রক্ষার সাহস পাইনি।
সুজন মন্ডল কান্না জরিত কন্ঠে হাসপাতাল হাসপাতাল শয্যায় শুয়ে জানান, মুই গরীব মানুষ মটর সাইকেল ভাড়ায় চালাইয়া সংসার চালাই। মুই টিটু দফাদারের কাছে পিছনের ভাড়া বাবদ সাড়ে ৬শ’ টাহা পাই। হেই টাহা চাইতে যাওয়ায় টিটু ও তার ৬/৭ জন লোক বাাঁশের লাঠি আর রড দিয়া মোরে পিডাইয়া হাত ভাইঙ্গা দেছে। হের পর শরীরের সব জায়গায় পিডাইছে। এর আগে বিকালেও অর লগে ভাড়ায় যাইতে চাই নাই দেইখ্যা মোরে বাড়ির দরজায় হালাইয়া মারছে টিটু।
অভিযুক্ত টিটু দফাদার মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, সামন্য মাইর ধইর করেছি । পাওনা টাকার কথা সম্পূর্ন অস্বীকার করেন। আরেক সহযোগী সুমন দফাদার মার ধরের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার হাতে একটি লাঠি ছিল তা দিয়ে সামন্য আঘাত করেছি।
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম মার ধরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, টিটু দফারকে মিমাংসার জন্য আমি ডেকেছি কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আসছে না।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সহিদ উল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে এখনো কোন মামলা হয়নি। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।