রাজধানীর গুলশানে সাবেক ফুটবলার ও সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বাড়ির অবস্থানের ওপর আট সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
ওই বাড়ি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে তিন মাসের মধ্যে হস্তান্তরে দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আবেদনে রোববার (২৪ মার্চ) এ আদেশ দেন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মো.আশফাকুল ইসলাম।
ফলে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ি হস্তান্তর করা লাগবে না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা।
গত ১৯ মার্চ দুপুরে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।
আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক।
হাইকোর্টের রায়ের পর অনীক আর হক বলেন, সালাম মুর্শেদীর গুলশানের যে বাড়ি, সেটি আসলে পরিত্যক্ত সম্পত্তি। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত আজ রায় দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সরকারের লিস্টে (তালিকা) রয়েছে। তাই এটি (সালাম মুর্শেদীর কাছে) হস্তান্তর সম্পূর্ণ অবৈধ।
আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তা বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭ এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।
রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন, রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল পূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেওয়ায় ফের ২০২২ সালের ৪ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে ভবনটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে সেটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।
রিটের পর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন। রুলে বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলে রাখার অভিযোগে আবদুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আর বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
পরে আদেশ ও কোর্টের কার্যক্রম ছাড়া এ মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা না করতে উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আদালতকে জানান, আদালতের নির্দেশের পর বাড়িটি নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে বাড়িটির বিষয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষীর ভিত্তিতে দুদক সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি মামলা হয়েছে। এখন মামলাটি তদন্তাধীন।
পরে এ সংক্রান্ত রুলের ওপর ৩ মার্চ শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।